প্রকাশ: রবিবার, ৮ মে, ২০২২, ২:৩৯ পিএম আপডেট: ২৫.১০.২০২৩ ৩:১৬ PM
তাসলিমা আকতার তাসমিনা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ আবর্তনের শিক্ষার্থী। যিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে দখল করেছেন ষষ্ঠ আসন। অজস্র শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তিতে থাকে একটা স্বপ্ন, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায় যার নাম বিসিএস। তিনটি ধাপ পেরিয়ে যারা সর্বশেষ ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে তাদেরকেই বিসিএস ক্যাডার বলা হয়। ঠিক ওই ফলাফল তালিকায় স্থান পেয়ে ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তাসলিমা।
তাসলিমার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি।
তবে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন মাস্টার্সের থিসিস জমা দেওয়ার পর যখন তিনি একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। প্রভাষক হিসেবে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরই চাকরি ছেড়ে দিয়ে একটি বিসিএস ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মনে মনে স্থির করেন এক বছর ভালোভাবে প্রস্তুতি নিবেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় কোচিং না করা ছাড়াই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করায় বিসিএস পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টারের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না তাসলিমার।
দীর্ঘ একটি বেকার জীবনে অনেক তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ ব্যাচ হওয়ার কারণে সিনিয়রদের কাছ থেকে বিসিএস নিয়ে জানাশোনার সুযোগ তেমন একটা হয়ে উঠেনি তাসলিমার। তবুও স্বপ্ন থেকে পিছপা হননি তিনি। টিউশনি করিয়েছেন, ম্যাথ ও ইংলিশে নিজের দূর্বলতা কাটিয়েছেন এবং সবকিছু ব্যালেন্স করে নিয়মিত কুমিল্লার ছোটরা পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে রুটিনমাফিক পড়ালেখা করেছেন।
তরুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীই নিজ নিজ জায়গায় সেরা এবং প্রচুর সম্ভাবনাময়। তাই পড়াশোনা চলাকালীন সময়ই সিদ্ধান্ত নিতে হবে পাঁচ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চাও। কোনো সিনিয়র এটা সেটা হয়েছে বলে আমাকেও এমনই হতে হবে তা নয় বরং তোমার ভেতরে হয়তোবা এর চেয়েও বিরাট কোনো সম্ভাবনা লুকায়িত আছে। নিজের ভেতরের মানুষটির কথা শোনো। যদি মনের গভীরে বিসিএসের জন্য টান অনুভব করো তাহলে আজ থেকেই বিসিএসের প্রিলি রিটেনের সিলেবাস নিয়ে পড়ার টেবিলে লেগে থাকো। অধ্যবসায় বিসিএসে সাফল্য এনে দিতে পারে।
বিসিএস প্রিলি এবং চাকরির পরীক্ষায় সহজে পার হতে হলে প্রথমত, বিগত বছরের প্রশ্নোত্তর ব্যাখ্যাসহ সমাধান করা।
দ্বিতীয়ত, নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই থেকে ম্যাথ বিজ্ঞান ও বাংলা ব্যাকরণের বেসিক ধারণা পরিষ্কার করে ফেলা এবং যাদের ম্যাথ ও ইংরেজিতে দুর্বলতা আছে তারা অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ম্যাথ ও ইংরেজি করার জন্য বরাদ্দ রাখা।
তৃতীয়ত, কিছুদিন পর পর মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেওয়া এবং সিলেবাস শেষ করার পর অনেক বেশি বেশি মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে নিজের নেগেটিভ মার্কিং এর অবস্থান চিহ্নিত করে তা কমিয়ে আনা।
অনুভূতি প্রকাশ করে তাসলিমা আকতার বলেন, আমি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যিনি আমার স্বপ্ন সার্থক করেছেন।পাশাপাশি আমার এই চলার পথে যারা আমার পাশে ছিলেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। চলার পথে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি তবুও স্বপ্ন দেখা ছাড়িনি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গার্লস হাইস্কুলের উপবৃত্তি, সরকারি কলেজ ও পরবর্তীতে পাবলিক ভার্সিটিতে পড়াশোনা করা আমি যেসব সাধারণ মেহনতি মানুষের ঘামঝরানো অর্থে আজ বড় হয়েছি। ক্যডার সার্ভিসে যোগদানের পর জনগণের চাকর হিসেবে তাদের ঋণ পরিশোধ করাটাই হবে আমার একমাত্র ব্রত। শিক্ষা ক্যাডার হলো জাতি গড়ার কাজে ব্রতী হওয়া।
আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো এই চ্যালেঞ্জিং প্রফেশনের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার যোগ্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যাতে দেশ ও জাতি গড়ার কারিগর হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সন্তানের মতো করে অকৃত্রিম ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রেখে তাদের জীবন গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি।
স্বদেশপ্রতিদিন/ইমরান