রবিবার ১০ নভেম্বর ২০২৪
দুর্বৃত্তদের হামলায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে
পদ্মায় ভেসে উঠল আরেক এএসআইয়ের মরদেহ
ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া
প্রকাশ: বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:৫২ পিএম
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় পদ্মা নদীতে নিখোঁজের দুই দিন পর আরেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মুকুল হোসেনের (৪০) মরদেহটি খোঁজ পাওয়া গেছে।

৩০ অক্টোবর বুধবার সকাল ৭টার দিকে পাবনার সুজানগর থানার নাজিরপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে মরদেহটি ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। নৌ পুলিশেরর একটি দল উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে সুজানগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা।

থানার ওসি বলেন, নাজিরপুর এলাকায় নদীতে এক পুলিশের ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। গিয়ে দেখা যায় মরদেহটি এএসআই মুকুলের। কুমারখালী থানা পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়েছে। নদীর ঘটনা হওয়ায় নৌ পুলিশ কাজ করছে।

ঘটনার পর জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার ভোর চারটার দিকে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয়জন পুলিশ সদস্য, স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য ও দুই মাঝি মিলে পদ্মার ওপারে চরসাদীপুর এলাকায় আসামি ধরতে যাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকটি নৌকার জেলেরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। তখন প্রাণ বাঁচাতে দুই পুলিশ সদস্য নদীতে ঝাঁপ দেন।

এরআগে অবৈধভাবে মৎস্য শিকারী দুর্বৃত্ত জেলেদের হামলায় সোমবার ভোরে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের শ্রীখোল এলাকায়  এই দুইজন এএসআইয়ের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক উপ উপরিদর্শক ও দুই ইউপি সদস্য।

নিহত সহকারী উপপরিদর্শক সদরুল হাসান পাবনার আতাইকুলা থানার কাজিপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের বড় ছেলে। আর সহকারী উপরিদর্শক মুকুল হোসেন (৪০) মেহেরপুরের কালাচাঁদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ছেলে। তারা কুমারখালী থানায় কর্মরত ছিলেন।

আহতরা হলেন- কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর সদস্য ছানোয়ার হোসেন ছলিম ও ৬ নম্বর সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটন।

কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আজ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০/৪৫ কিলোমিটার দূরে পাবনার সুজানগরের নাজিরপুর এলাকায় এএসআই মুকুলের মরদেহটি পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূর থেকে ভাসমান অবস্থায় নিখোঁজ পুলিশ সদরুলের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিরা উদ্ধার হওয়ায় তাদের অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ভোরে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য নৌকা নিয়ে পদ্মা নদীতে যান। এ সময় তাঁরা জেলেদের মাছ লুট করার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বেশ কয়েকটি নৌকার লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালান।

বেড় কালোয়া এলাকার জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় জেলেরা প্রথমে তাঁকে ফোন দিয়ে জানান, নদীতে ঝামেলা হচ্ছে। ইউপি সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা এসে জেলেদের কাছ থেকে তেল ও মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। ওই খবর শুনে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে এএসআই সদরুল আমাকে ফোনে বলেন, “ভাই, আমরা বিপদে আছি। সাহায্য করেন।” তখন একটি নৌকায় চারজন গিয়ে এসআই নজরুলসহ চার পুলিশ সদস্য ও দুই ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এসআই নজরুলের মাথায় আঘাত ছিল।’

ইয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পুলিশ সাদাপোশাকে ছিল। ইউপি সদস্যরা জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতে পুলিশ নিয়ে এসেছিলেন। ৩০ থেকে ৪০ জন জেলে ডাকাত ভেবে হামলা চালিয়েছিলেন।’

পুলিশের আসামি ধরতে যাওয়া ও জেলেদের হামলার বিষয় নিয়ে এলাকায় ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, চরসাদীপুরে পদ্মা পাড়ি দিয়ে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। পদ্মার ওপারে পাবনা শহরের কাছাকাছি এলাকায় পুলিশ খুব কমই যায়। দিনের বেলা ঘটনা ঘটলে পুলিশ যেখানে যেতে অনীহা দেখায়, সেখানে গভীর রাতে যাচ্ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, চরসাদীপুর বা খেয়াঘাট শিলাইদহ ইউনিয়নের কোনো ইউপি সদস্যকে সঙ্গে না নিয়ে দূরের ইউপি সদস্যদের নিয়ে কেন পুলিশ আসামি ধরতে যাওয়ার কথা বলছে। এমনকি আসামি ধরতে গেলে সিভিল পোশাকে ও অস্ত্র ছাড়াই কেন যাবে?

এদিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীতে নিখোঁজের পর মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা সদরুল আলমের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ৩০ অক্টোবর বুধবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়।

ময়নাতদন্ত করা বোর্ডের এক চিকিৎসক  বেলা পৌনে ১২টার দিকে বলেন, ‘সদরুল আলমের মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। যেটা দেখে মনে হয়েছে “বড়” আঘাত। এ কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’

কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার অভিযোগে কুমারখালী থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রাত পৌনে নয়টায় কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০–২৫ জনকে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাঁদের নাম ও সংখ্যা সন্ধ্যায় প্রকাশ করা হবে।’

স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






● সর্বশেষ সংবাদ  
● সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
অনুসরণ করুন
     
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী
স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড -এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক আবরণ প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24@gmail.com, info@swadeshpratidin.com
● স্বদেশ প্রতিদিন   ● বিজ্ঞাপন   ● সার্কুলেশন   ● শর্তাবলি ও নীতিমালা   ● গোপনীয়তা নীতি   ● যোগাযোগ
🔝