কুড়িগ্রাম রৌমারীতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ভোগান্তিতে এলাকাবাসি। গত কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মানকারচর কালো নদী ও ধরনী নদী দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জিঞ্জিরাম নদী দিয়ে নেমে আসে এ পানি। এতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জিঞ্জিরাম নদীর কিনারা উপচে গিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর ও শৌলমারী ইউনিয়নের নওদাপাড়া, চান্দারচর, রতনপুর, বেহুলারচর, মোল্লারচর, খাটিয়ামারী, বোল্লাপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, ভুন্দুরচর, ইজলামারী, পূর্ব ইজলামারী, বারবান্দা, উত্তর বারবান্দা, দক্ষিণ বারবান্দা চুলিয়ারচর, ঝাউবাড়ী, বড়াইবাড়ী, কলাবাড়ী, আলগারচর এলাকার নিম্নঅঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ। ফলে ওই এলাকার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা বা ভেলাদিয়ে পারাপার হচ্ছে। পাশাপাশি তলিয়ে গেছে আমন ধান, বাদাম, মরিচ, মাসকালাই, খেশারি কালাই, সবজির টাল ও বিভিন্ন শাকসবজিসহ প্রায় ১৫’শ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারনা করছে কৃষকেরা।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর উপচে গিয়ে বাগুয়ারচর, ফলুয়ারচর, চর বাঘমারা, পালেরচর, বড়চর এর নিম্নাঅঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে গুরত্বপূর্ণ কিছু কাচাপাকা রাস্তায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে। এ কারণে স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয়রা পায়ে হেটে তাদের গন্তব্যস্থনে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে রৌমারী স্থলবন্দরটিও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কৃষক মো: নুরুল ইসলাম বলেন, ধার দেনা করে আমি এবছর ২বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। অসময়ে বানের পানি এসে আমার সব তলিয়ে গেছে।
কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি এবার ছাগল বিক্রি করে ও মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে ১৫ কাটা জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ করেছিলাম। হঠাৎ করে বন্যার পানি এসে সব তলিয়ে গেছে। আমি কিভাবে মানুষের টাকা পরিষদ করবো। আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। আমি এখন আমার সংসার কিভাবে চালাবো। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, আমি গরু বিক্রি করে এবছর চরে ২ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছি । কিছু দিন থেকে বৃষ্টি ও অসময়ে বন্যার পানি এসে আমার জমি তলিয়ে যায়। দ্রুত পানি নেমে না গেলে আমাকে পথে বসতে হবে।
রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন আব্দুল রাজ্জাক বলেন, কয়েকদিনের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আামার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আরো কয়েকদিন এ অবস্থা থাকলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশে করেছে। বন্যায় আমনধান ১ হাজার ১১৫, শাকসবজি ৭১, মাসকলাই ৩৬, বাদাম ১৯, পিয়াজ ১৩ ও অন্যান্য ফসলসহ প্রায় ১ হাজার ৫’শ ১৫ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে আংশিক ক্ষতি হতে পারে। তবে পানি নামতে দেরি হলে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর