শেখ হাসিনা সরকারের ‘মদদপুষ্ট’ নির্বাচন কমিশন ও দূর্নীতি দমন কমিশন পূণর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।দেশের দুই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে বিগত শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা বসে আছেন বলে অভিযোগ করে অবিলম্বে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়া দাবি জানান।
বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,এখন অতীব জরুরী নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন করা, অতীব জরুরী দূর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করা। কারণ এই দুটা প্রতিষ্ঠানে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই সমস্ত সুবিধাভোগীদের ঝেটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা আশা করি, এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। তারা তাদের সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা শাসনামলে গঠিত নির্বাচন কমিশন তাদের ‘তল্পিবাহক’ ছিলো অভিযোগ করে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন এই দেশের বিগত রেজিম যেটি ছিলো সেটিকে পাকাপুক্ত করার জন্য যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সেটি হলো এই ভুয়া নির্বাচন কমিশন। তারা দলদাস তল্পিবাহক একটি কমিশন। ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে আজকেও তাদের গঠন করা নির্বাচন কমিশন বহাল তবিয়তে বসে আছে।
তিনি বলেন, তারা গত ৭ জানুয়ারি ‘আমি আর ডামি’র নির্বাচন করেছে, যারা এক সময়ে দিনের ভোট রাতে করেছে, যারা এক সময়ে বিনা ভোটে এমপি উপহার দিয়েছে। এই তিনটা নির্বাচন কমিশন আমরা এরকমই দেখেছি।
বর্তমান এই কমিশন আজ অবধি নির্লজ্জের মতো বসে আছে। আমি মনে করি, এই নির্বাচন কমিশনের বোধদয় হওয়া উচিত। জনগনের রোষ থেকে বাঁচার জন্য পদত্যাগ করে এই সরকারকে সুযোগ দেয়া উচিত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের। অন্যথায় ‘সত্যিকার অর্থে জনরোষ থেকে কেউ রক্ষা পাবে না’ বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
একই সঙ্গে দূর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুদকের যে সমস্ত কমিশনার ও কর্মকর্তারা এখনো বসে আছেন বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে। অন্তর্বতীকালীন সরকারকে বলব, অতীব জরুরী দুদক পূণর্গঠন করুন। কারণ দুদকে পতিতদের আত্বীয় স্বজন, উনাদের সুবিধাভোগী লোকজনকে বসিয়ে রেখে ততকালীন বিরোধী দলসহ দেশের মানুষের ওপর র্নিযাতন চালানো হয়েছে। আজকে ১৮ন লক্ষ কোটি টাকা বলেন আর ১৫ লক্ষ কোটি টাকা বলেন পাচার কৃত অর্থ ফেরত আনতে হলে, ব্যাংক লুটের অর্থ ফিরিয়ে আনতে হলে, সেই সংবাদ কর্মী হোক, চিকিৎসক হোক, স্বাস্থ্যখাতের দূর্নীতি বের করতে হলে, আইসিটির দূর্নীতি বের করতে হলেও অথবা গেটওয়ের দুর্নীতি বের করতে হলেও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন দরকার।নির্মোহ ভাবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন। এসব সুবিধাভোগীচদেরকে ঝেটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব।
এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ দূর্গত মানুষের জন্য নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ সামগ্রি দিচ্ছে। আমি দুইদিন আগে বলেছিলাম প্রায় ১০ কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রি বন্যা কবলিত এলাকায় সমন্বিতভাবে বিতরণ করা হয়েছিলো আজ থেকে তিনদিন আগে। আমাদের এই ত্রাণের কার্য্ক্রম, ব্যাপকতা, গ্রহনযোগ্যতা, অংশগ্রহন এমন আকার ধারণ করেছে আমরা গতকালকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকার অধিক ত্রাণ সামগ্রি এবং নগদ অর্থ দূর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পেরেছি।
বিতর্কিতদের ত্রাণ গ্রহন করছি না উল্লেখ করে জাহিদ বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই ত্রাণ আমরা শুধু একটি জিনিস খেয়াল রাখছি নৈতিকভাবে দূর্বল অবস্থানে যারা আছেন তাদের ত্রাণ আমরা গ্রহন করছি না। মনে রাখতে হবে আমরা চাই, বিগত রেজিমে সুবিধাভোগী মানুষ যাতে এখানে ঢুকে না পড়ে, ত্রাণ দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে না পারে সেই বিষয়টি বিএনপি অত্যন্ত সচেতনতার সাথে খেয়াল রাখছে। তবে, দুই একটি জায়গায় একটু ভুল হয়েছিলো। আমরা তাদের সেই ত্রাণ সহায়তা ফিরিয়ে দিয়েছি। কাজেই আমরা এই ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ।এই ত্রাণে অংশগ্রহন করছে এদেশের বেশিরভাগ সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ। জাতীয়তাবাদী পরিবার এবং সেই সাথে সাধারণ শ্রেনী-পেশার মানুষ অংশগ্রহন করছে।
তিনি জানান, বন্যার্তদের জন্য খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ আরও দুইদিন চলবে। এরপর বিএনপি পূর্ণবাসন কাজে নামবে। এর মধ্যে থাকে বন্যা কবলিত এলাকায় ,মানুষের বাড়িঘর নির্মাণে সহযোগিতা করা, গবাদি-পশু দিয়ে সহায়তা করা, বীজ সরবারহ করা, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই-খাতা প্রভৃতি কাজ সাধ্যমত বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় করবে।
তিনি বলেন, একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। আমরা তো সরকার না। সরকার তার নিজস্ব কার্য্ক্রম করছে।
সরকারের পাশাপাশি বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যক্তি ও জনগনের দল। সেই জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শক্রম এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় এই ত্রাণ কার্য্ক্রম চালাচ্ছে। আমরা বিএনপি পরিবার বন্যার্তদের পাশে আছে, থাকবে।
সংবাদ সম্মেলন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব ও ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম আজাদ, সদস্য মীর সরাফত আলী সপু, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর