রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
সাতক্ষীরায় পাট উৎপাদন করে লোকসানে কৃষক
হাবিবুর রহমান সোহাগ, সাতক্ষীরা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:২৮ পিএম
ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন সাতক্ষীরার পাটচাষীরা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার মণপ্রতি পাট ১ হাজার ৩০০-১ হাজার ৪০০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে বিঘায় ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানানকৃষক। অন্যদিকে জেলার আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাট রফতানি কম হওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, দেশের অধিকাংশ পাট রফতানি হয়ে থাকে রাশিয়ায়। যুদ্ধের কারণে সেদেশে রফতানি বন্ধ রয়েছে।

জেলার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নারানঝজাল গ্রামের পাটচাষী পলাশ হোসেন জানান, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। গত বছর বিঘাপ্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকার মতো খরচ হলেও চলতি বছর ১৯-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু সেই হিসাবে পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। 

কৃষক পলাশ হোসেন  জানান, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, তিন বিঘা জমির যে পাট উৎপাদন হয়েছে তা হয়তো ১৮-২০ মণ হতে পারে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪২-৪৪ হাজার টাকা। ফলে তিন বিঘা জমির পাট চাষে অন্তত ১৫-১৬ হাজার টাকা লোকসান হবে।

সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি গ্রামের কৃষক আব্দুর  সালাম জানান, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে এবার পাট চাষে তিনি ব্যাপক দুুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে উৎপাদিত পাট পচাতে অত্যন্ত  বেগ পেতে হয়েছে। দীর্ঘদিনবৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় কাটা পাট পরিবহন করে দূরের খালে নিয়ে পচাতে হয়েছে। এতে তার শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে পাটের যে দাম রয়েছে তাতে হতাশায় পড়েছেন কৃষক আব্দুর  সালাম। 

তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। সেখানে একই জমির পাট বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪-১৫ হাজার টাকা। এ কারণে দেড় বিঘা জমির পাট চাষ করে তার ১০-১২ হাজার টাকা লোকসান হতে পারে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারের পাট ব্যবসায়ী ও আড়তদার রেজাউল ইসলাম জানান, গত বছর এ সময় যে পাট ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে তা বর্তমান ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের দেশের উৎপাদিত পাটের বেশির ভাগ রফতানি হয়ে থাকে রাশিয়ায়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে রাশিয়ায় পাট রফতানি আপাতত বন্ধ থাকায় দাম কমেছে। ফলে চাষীরা লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। 

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, চলতি মৌসুুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ১১ হাজার  ৮৫৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৮২৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৩ হাজার ৮৫৫, তালায় ৩ হাজার ৫৫, দেবহাটায় ৬০, কালীগঞ্জে ২৫, আশাশুনিতে ৯৫ এবং  শ্যামনগর উপজেলায় ৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। 

সূত্রটি আরো জানায়, গত মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৮২০ হেক্টর। জেলায় এবার দেড় লাখ বেল্ট পাট উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক  মো. সাইফুল ইসলাম বণিক বাংলাদেশকে জানান, পাট একটি লাভজনক ফসল। তাছাড়া জেলার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে ভালো উৎপাদনও সম্ভব। কিন্তু পাট রফতানি চাহিদা যদি ভালো না হয় তাহলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন না। তার পরও লোকসান হওয়ার মতো ফসল এটি না। কিন্তু এবার চাষীদের খরচ একটু বেশি হয়েছে। তার কারণ হলো সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় তারা বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে পাট পচায়। এতে করে শ্রমিক বা পরিবহন খরচ বাড়তি লেগেছে।

স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






● সর্বশেষ সংবাদ  
● সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
অনুসরণ করুন
     
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী
স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড -এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক আবরণ প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24@gmail.com, info@swadeshpratidin.com
● স্বদেশ প্রতিদিন   ● বিজ্ঞাপন   ● সার্কুলেশন   ● শর্তাবলি ও নীতিমালা   ● গোপনীয়তা নীতি   ● যোগাযোগ
🔝