বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে রশিদপুর পর্যন্ত রেললাইন পানিতে ডুবে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) দুপুর ১ টার পর সিলেট থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ৬ টায় পাহাড়িকা ট্রেন সিলেট থেকে ঢাকা ছেড়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে রশিদপুরের মাঝামাঝি রেললাইনের ওপর দিয়ে বন্যার পানি চলাচলের কারণে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ আছে।
তিনি আরও বলেন, সকাল ১০ টায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সিলেট থেকে চলে গেছে আর কোনো ট্রেন চলে যেতে পারেনি বা আসেনি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় আম্বরখানার বাসিন্দা সাজু আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিলেট থেকে ঢাকার যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনের টিকেট কেটেছি কিন্তু এখন ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে গেলাম।
নগরীর শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা সায়েম আহমদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কীভাবে ঢাকা যাব তা নিয়ে এখন বিপাকে আছি।
এর আগে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পর থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলরত আন্তঃনগরসহ সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ফেনী এবং কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস এবং সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ট্রেনগুলো গন্তব্যে যেতে পারেননি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেনী থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত রেললাইন পানিতে ডুবে গেছে। অনেক জায়গায় রেলসেতুর ওপর দিয়ে পানি চলাচল করছে। আর বন্যায় কুমিল্লায় রেললাইন উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফেনী স্টেশনে বন্যার পানি জমে রয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, জামালপুর, সিলেট ও চাঁদপুরে প্রতিদিন ১১টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া কক্সবাজার, নাজিরহাট, চাঁদপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার মনিরুজ্জামান জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত পাহাড়িকা, সুবর্ণ ও সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় আর কোনো ট্রেন ছাড়া হয়নি। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে মালবাহী ট্রেন চলাচলও।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে ৬ জেলার তথ্য দিয়ে বলেছে, আকস্মিক বন্যায় মোট ১ লাখ ৮৯ হজার ৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৭ লাখ ৯৬ হাহার ২৪৮ জন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী-আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর