রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনায় ১৮ ছাত্র নেতার একটি কমিটি ছিল। নেতৃত্বহীনতা ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সাথে কর্মসূচির মিল না থাকার জেরে স্বেচ্ছায় বা জোরজবরদস্তি করে গত ১১ জুলাই শিক্ষার্থীরা তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন নেতা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনকে স্বাগত জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি মানতে সরকারকে ৩০ দিন সময় দিয়ে সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে, এ সমন্বয়কদের মামলা দিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা জোরপূর্বক এমন সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে বলে অভিযোগ দেন রাবি কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। এছাড়া পাঁচজন সমন্বয়কের করা সংবাদ সম্মেলন নিয়েও তিনি গতকাল ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখনো আন্দোলন থেকে সরে আসেনি। যারা প্রেস ব্রিফিং করেছে তারা আগে থেকেই পদত্যাগ করেছেন। তাদেরকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামলা দিয়ে চাপ প্রয়োগ করেছে। আমাকেও মামলার প্রধান আসামি করে বিভিন্ন চাপে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তে ফেলে আন্দোলন থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সমন্বয়ক কমিটি না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা আন্দোলনটি পরিচালিত হচ্ছিল, যার ফলশ্রুতিতে পর পর দুইবার মিডিয়ার মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন মানুষ এসে নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এই আন্দোলনকে থামানোর চেষ্টা করেছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।
সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আমি বৃহৎ আন্দোলনের স্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ ঘোষণা করছি। আমি যদি প্রেস ব্রিফিং করি বা ঘোষণা দেই তাহলে সবাই বুঝবেন যে এটাই সত্য। ৫২ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে কথা বলে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি আপনারা আর ভুল তথ্য পাবেন না। শুরু থেকেই আন্দোলনে ছিলাম এবং শেষপর্যন্ত থাকব। কেন্দ্রের সমন্বয়করা যখন আন্দোলনের শেষ ঘোষণা করবেন তখন আমরা রাবিয়ানরাও শেষ ঘোষণা করব।
সংবাদ সম্মেলন নিয়ে এই সমন্বয়ক আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে তারা (সংবাদ সম্মেলন করা পাঁচজন সমন্বয়ক) যোগাযোগ করেননি। তারা আসলে আন্দোলনে যে হামলা-মামলা হুমকি এগুলো হবে বুঝলে হয়তো আন্দোলনে আসত না। সংবাদ সম্মেলনের পর জরুরিভিত্তিতে আমরা একটা সমাধানের প্রয়োজন বোধ করি। সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রবাসী শিক্ষার্থীসহ অনেকে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করছিলেন, তখন জরুরিভিত্তিতে ফেসবুকে আমি পোস্ট করি। একটা হুমকিতে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী (বর্তমান) আর সাবেক লাখ লাখ শিক্ষার্থীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনই নেতৃত্বের গুণাবলি হতে পারে না। এখন থেকে আমি সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছি এবং কেন্দ্র থেকে যে আপডেট আসবে সেটা আমি রাবিতে সমন্বয় করব।
অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সমন্বয়করা হলেন- রেজোয়ান গাজী মহারাজ, তোফায়েল আহমেদ তপু, সুজন কুমার ভৌমিক, মনিমুল হক ও মোকারম হোসেন।
উল্লেখ্য, হল কক্ষ ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম মিয়ার করা মামলায় প্রধান আসামি সালাউদ্দিন আম্মারসহ তোফায়েল আহমেদ ও মমিনুল হকের নাম আছে।
এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা তদন্তে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্যাহকে আহ্বায়ক করে বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে আছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল। কমিটিকে আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে ঘটনার বিবরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও সুপারিশ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনার প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। এতে ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় চার কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর