প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪, ৪:৩১ AM
দাবি আদায়ে ৩০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের আট দফা দাবি আদায় না হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবারও আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা। এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা আহত এবং শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে রাবিতে সংঘটিত আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আমাদের এক দফা দাবিটির সন্তোষজনক সমাধান হয়েছে। এতে সারা দেশের ছাত্রসমাজ সন্তুষ্ট। তবে আন্দোলনের মধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা দাবি ছিল। আট দফা দাবির মধ্যে কোটা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। কারফিউও শিথিল করা হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে ইন্টারনেট সেবাও চালু হচ্ছে। এসবের বাইরে আমাদের দাবি হলো, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রশাসন কর্তৃক নিশ্চিত করতে হবে। অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারে অবস্থান করবে। আবাসিক হলগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পরিবারে ক্ষতিপূরণ এবং তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে; আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নিয়ে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরা আবারও মাঠে নামবো।’
রাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও মামলার বিষয়ে শুনিনি। যদি আমাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কারণ আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনও সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম না। আইনমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, অবশ্যই এই মামলা প্রত্যাহার হবে। এই মামলা প্রত্যাহার না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো।’
এ সময় সম্বনয়কারীরা আরও জানান, ঢাকা থেকে সমন্বয়কারীদের ৮ দফা দাবিগুলোর সঙ্গে তারা এক মত। তবে তাদের মনে হয়েছে যে সরকার এ দাবিগুলো পূরণে বেশ সচেষ্ট। তাই ৩০ দিন সময় বেধে দিয়ে তারা এ আন্দোলন স্থগিত করেছেন। তবে এ ৩০ দিনের মধ্যে রাবির হলগুলো থেকে ছাত্রলীগের একছত্র আধিপত্য বাদ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে আবাসন দিতে হবে। ক্যাম্পাসের কোন শিক্ষার্থীর নামে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন তারা। এই দাবিগুলো পূরণ না হলে এক মাস পর তারা আবার আন্দোলনে নামার হুশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত বিভাগের সুজন ভৌমিক, অর্থনীতি বিভাগের তোফায়েল আহমেদ ও মনিমুল হক এবং আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রেজোয়ান গাজী মহারাজ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বিকালে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হলকক্ষ ভাঙচুর এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাবি শিক্ষার্থীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১৭ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় এই মামলা করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে তোফায়েল আহমেদ এবং মনিমুল হকও এই মামলার অন্যতম আসামি।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর