ঢাকা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. ওয়াকিল উদ্দিন। গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে তার নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঢাকা-১১ আসনটি রাজধানীর পুরো বাড্ডা থানা ও ভাটারা থানার বেরাইদ, ভাটারা ও সাঁতারকুল ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১, ২২ ও ২৩ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
আলহাজ মো. ওয়াকিল উদ্দিন নৌকার মনোয়ন পেয়েছেনÑ এই খবরে মূহুর্তেই ঢাকা- ১১ আসনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। টিভিতে মনোনয়ন ঘোষণার লাইভ দেখে স্থানীয় সকল স্তরের নেতাকর্মীরা আনন্দে ফেটে পড়েন। এ সময় শত শত দলীয় নেতাকর্মী স্লোগানমুখর মিছিল নিয়ে রাজপথে নামেন এবং পরে নেতাকর্মীরা তার গুলশানের অফিসে এসে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এক প্রতিক্রিয়ায় বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিলউদ্দিন আহম্মেদ এর মত একজন পরীক্ষিত নেতাকে ঢাকা-১১ আসনে নৌকার মনোয়ন দেওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ত্যাগী এই নেতাকে নির্বাচিত করে এলাকার অধিকতর উন্নয়ন ঘটাবো আমরা।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল বলেন, ‘ওয়াকিল ভাই তৃণমূলের একজন নেতা। দল তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় সবাই খুশি হয়েছি। আশা করি তিনি নির্বাচিত হলে এই এলাকার জন আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারবেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য আফরোজা খন্দকার বলেন, ‘আমরা তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে সংসদে পাঠাবো, ইনশাআল্লাহ।’ ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রবিউল আলম সোহেল বলেন, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আমরা তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবো।
গণমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিন রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ীও। তিনি বারিধারা কর্পোরেশন লিমিটেড ও বারিধারা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়া দেশের সেরা আবাসন কোম্পানি স্বদেশ প্রোপার্টিস লি: -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় স্বদেশ প্রতিদিনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. ওয়াকিল উদ্দিন বলেন, ‘আমি মনে করি দীর্ঘদিন পর দল আমার প্রতি সুবিচার করেছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করেছেন। আমি খুবই আনন্দিত যে, এই আসন থেকে নির্বাচিত হলে বড় আঙ্গিকে মানুষের সেবা করার সুযোগ পাবো। যদিও অতীত সময় থেকে আমি সবসময় মানুষের পাশে আছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর কমিশনার ছিলাম ও চেয়ারম্যান ছিলাম। জনপ্রতিনিধি হওয়ার মাধ্যমে মানুষের সুদিন-দুর্দিনে পাশে থাকা যায়। আমি নির্বাচিত হলে ঢাকা ১১ আসনের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ শুরু করবো এবং আমি সাধারণ মানুষের কাতারে মিশে গিয়ে কাজ করতে চাই। ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিলাম।’
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত ঐতিহ্যবাহী দলের মনোয়ন পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। আমার প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যার বিশ^াস ও আস্থা অটুট রাখবো ও ঢাকা-১১ আসনের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত পরিবর্তনে কাজ করবো।’
ওয়াকিল উদ্দিনের বর্ণাঢ্য জীবন রাজনৈতিক জীবন : বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় তার। ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করার পর তেজগাঁও কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা জেলার ডেমরা-তেজগাঁও আসনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রার্থী হলে তার নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেন এবং বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেন। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় গুলশান থেকে বিশাল লাঠি মিছিলসহ জনসভায় যোগদান করেন ওয়াকিল উদ্দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নির্দেশে এবং পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে খণ্ডকালীন কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে সকল দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগ বৃহত্তর গুলশান থানার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জান্তা সরকার ধরপাকড় শুরু করে। সে সময় তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালায়, না পেয়ে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে প্রায় তিন বছর মানবেতর জীবনযাপন করেন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পুনরায় এলাকায় এসে নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী নিয়ে বিমানবন্দর সড়কে বনানী-কাকলী স্পটে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তার দু-ধারে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান।
১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকারের অধীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করার পর খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া আসন ঢাকা-৫ (তৎকালীন গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট)-এর উপনির্বচানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৮নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ৯৩-৯৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রোষানলে পড়ে প্রায় ২৫টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হন। ১৯৯৩-২০০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯৩-৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় থাকেন। ২০০৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।