
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপজনিত অনেক রোগের মধ্য প্রি-এক্লাম্পসিয়া একটি। যার ফলে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০০,০০০ ভ্রূণ এবং ৭০,০০০ গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে প্রি-এক্লাম্পসিয়া হয়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল পেরিনেটাল এপিডেমিওলজি ইউনিটের সর্বশেষ MBRRACE প্রতিবেদন অনুসারে, প্রসবের সময় বা গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহের মধ্যে মারা যাওয়া মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে। গত এক দশকে যুক্তরাজ্যে বেড়েছে ১৫%। প্রতিবেদনে দেখা যায়, তিন বছরে ৯ জন মহিলা প্রি-এক্লাম্পসিয়ায় মারা গেছেন, যার সবকটি মৃত্যুই প্রতিরোধ করা যেত। অর্থাৎ, প্রি-এক্লাম্পসিয়া কেন হয়, এর লক্ষণগুলো কি এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসার মাধ্যমে এই মৃত্যুগুলো প্রতিরোধ করা যেত।
অনেকের ধারণা, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করলেই গর্ভবতীরা প্রি-এক্লাম্পসিয়ায় আক্রান্ত কিনা তা বুঝা যাবে। কিন্তু এটি যথেষ্ঠ নয়।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল ফার্মাকোলজিস্ট এবং থেরাপিউটিকসের অধ্যাপক ইয়ান উইলকিনসন বলেছেন, "প্রি-এক্লাম্পসিয়ায় মৃত্যুর দুটি প্রধান কারণ হল স্ট্রোক এবং দীর্ঘায়িত ফিটিং।" “প্রি-এক্লাম্পসিয়াতে যা ঘটে তা হল রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে কৈশিকগুলো ফুটো হয়ে যায়, যার ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং স্ট্রোক হয়। অথবা মস্তিষে্ক খুব যন্ত্রণা [স্ফীত] হয়। এবং মহিলারা ঠিক হতে শুরু করে। কিন্তু, গুরুতর মাথাব্যথার মতো উপসর্গগুলি প্রি-এক্লাম্পসিয়ার একটি বড়ো লক্ষণ, তা অনেকেই খেয়াল রাখেনা। যার ফলে, গর্ভবতী মহিলারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। গর্ভাবস্থার কোনো জটিলতা নেই এমন মহিলাদের তুলনায় যেসব মহিলারা গর্ভাবস্থায় এই অবস্থার সম্মুখীন হন, তাদের স্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি 20 গুণ বেশি। ফলস্বরূপ, পরবর্তী জীবনে তাদের স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দুই থেকে তিনগুণ বেশি থাকে।
এছাড়াও, প্রি-এক্লাম্পসিয়া শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে। এবং এই শিশুরা জন্মগত হৃদরোগ এবং কিডনি রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা আশা করছেন আরও নতুন গবেষণা করবেন যেখানে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মহিলাদের সনাক্ত করে তাদের উন্নত চিকিৎসা প্রদান করবেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সিলেন্সের পরামর্শ হল, যে মহিলারা প্রি-এক্লাম্পসিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করা হয় তাদের গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহ থেকে জন্ম পর্যন্ত প্রতিদিন ৭৫-১৫০মিলিগ্রাম ডোজ অ্যাসপিরিন গ্রহণ করা উচিত। তবে, দেখা যাচ্ছে যে অনেক মহিলা যারা অ্যাসপিরিন চিকিত্সা থেকে উপকৃত হচ্ছে, এর পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় তারা তা পাচ্ছে না।
/এমএ/