বুধবার ২৯ নভেম্বর ২০২৩
ফুটবলের বাস্তবতা ও একজন ইমরুল হাসান
আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৫:১৮ পিএম
ফুটবলের বাস্তবতা ও একজন ইমরুল হাসান

ফুটবলের বাস্তবতা ও একজন ইমরুল হাসান

অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা নেই। সত্যিই কি তাই? মনে হয় না। ফিফা বিশ্বকাপের উন্মাদনায় বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বসেরাদের কাতারে। রাত জেগে ইউরোপ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের লীগ ফুটবল দেখার মত ভক্তেরও অভাব নেই। শুধু দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোয় শোনা যায় দর্শকশূন্য গ্যালারির আর্তনাদ। তাতেই ফুটবলের জনপ্রিয়তা প্রশ্নে লেগেছে কালো দাগ। আশার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে সেই কালো দাগ ধুয়েমুছে পরিষ্কারের চেষ্টা করছে বসুন্ধরা কিংস। চেষ্টা করছে মাঠে ফুটবলের দর্শক ফিরিয়ে আনার। আর বসুন্ধরা কিংসের সেই প্রচেষ্টার পুরোধায় আছেন একজন ইমরুল হাসান, বাংলাদেশের সেরা ক্লাবের আধুনিক চিন্তামনস্ক সভাপতি।

এটা সত্যি, ঘরোয়া ফুটবলে বিগত শতাব্দীর আশি-নব্বই দশকের মত স্টেডিয়ামে উপচে পড়া দর্শক দেখা যায় না। কারণ হিসেবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যর্থতা। অথচ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সাফল্য ছিলই বা কবে? ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতি ট্রফি আর ২০০৩ সালের সাফ শিরোপা বাংলাদেশের ফুটবলের 'সবেধন নীলমণি' অর্জন। তবু উল্লিখিত সময়ে ফুটবল জনপ্রিয় ছিল। আকাশ সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করেনি। তথ্য-প্রযুক্তি ছিল আঁতুড়ঘরে। মানুষের বিনোদনের মাধ্যম বলতে ছিল ফুটবল আর চলচ্চিত্র। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আকাশ-সংস্কৃতির অবাধ বিস্তারে বাংলাদেশিদের হাতের মুঠোয় চলে আসে পুরো বিশ্ব। ড্রইংরুমের বোকা-বাক্সে নিত্য অবলোকনের সুযোগ হয় রোনাল্ডো নাজারিও, জিনেদিন জিদান থেকে শুরু করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি আর নেইমারদের খেলা। পিছিয়ে পড়ে জুয়েল রানা, আরমান আজিজ আর রজনী কান্ত বর্মণরা। পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হবে, ভাগ্যবান ছিলেন কাজী সালাহউদ্দিন আর সালাম মুর্শেদি কিংবা শেখ আসলামরা। এমনকি চুন্নু, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না, সাব্বিরদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি পেলে, জর্জ বেস্ট, জোহান ক্রুয়েফ আর ম্যারাডোনাদের সাথে। যেহেতু বিশ্বসেরা ফুটবলারদের খেলা দেখার সুযোগ মিলত কালেভদ্রে। 

বাংলাদেশের ফুটবলের 'সোনালী সময়' হিসেবে ধরা হয় সত্তর থেকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশ সাফেও নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে পারেনি। তবে ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া ফিফা র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০ এর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছে। সাফ অঞ্চলে ভারতের কাছাকাছি ছিল বাংলাদেশের অবস্থান। ২০০৩ সালে বহুল কাঙ্ক্ষিত সাফ শিরোপা জয়ের পর বাংলাদেশের ফুটবল ঘুরে দাঁড়াবে, ধরে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আদতে সেটা হয়নি। বরং সাফ বিজয়ের এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের ফুটবল যেন তলাতে শুরু করে ব্যর্থতার চোরাবালিতে।

যে কোন দেশের ফুটবল জনপ্রিয়তা নির্ভর করে ঘরোয়া প্রতিযোগিতার সাফল্যে। একটা সময় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আর আবাহনী ক্রীড়া চক্র মাতিয়ে রেখেছে দেশের ফুটবল। রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক দৈন্যতায় মোহামেডান হারিয়েছে নিজস্ব সাফল্যময় ঐতিহ্য। ঢাকা আবাহনী ধরে রেখেছে সাফল্য। অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের হাতে গড়ে ওঠা আবাহনীকে এক সময় বলা হত 'আধুনিক ফুটবলের ধারক'। ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশি কোচ বিল হার্টকে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দূরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশি কোচ ছিল না।

আবাহনী সাফল্য অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তাদের নেই শেখ কামালের মত একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তাই আবাহনীর ধ্যান-ধারণা আটকে আছে সত্তর-আশি দশকেই। পক্ষান্তরে হালের বসুন্ধরা কিংস নিয়েছে আধুনিক ফুটবলের চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের কোন ক্লাবের নিজস্ব স্টেডিয়াম ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু বসুন্ধরার কিংস অ্যারেনা এখন বাস্তবতা। গুছিয়ে আনা হয়েছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ। ভবিষ্যতে বসুন্ধরা কিংস একাডেমি দল পরিচালনা করবে বিদেশি কোচ দিয়ে উঠে আসবে তরুণ খেলোয়াড়।

আমাদের সৌভাগ্য, বসুন্ধরা কিংসের মাধ্যমে আমরা একজন ইমরুল হাসানকে পেয়েছি। যিনি স্বপ্ন দেখতে জানেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন, দেশের ফুটবল জাগাতে নিজেরা ট্রফি জিতলেই হবে না। গড়ে তুলতে হবে নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠী। গ্যালারিভর্তি সমর্থক না থাকলে যে কোন সাফল্যই বৃথা। ইমরুল হাসান দেশের প্রতিটা জেলায় বসুন্ধরা কিংসের ফ্যান-ক্লাব গড়ে তোলায় মনোযোগী হয়েছেন। মোহামেডান-আবাহনীর নিজস্ব সমর্থক রয়েছে ঐতিহ্যগতভাবেই, কিন্তু তারা স্টেডিয়ামবিমুখ। ইমরুল হাসান বসুন্ধরার সমর্থক তৈরি এবং তাদের মাঠে আনার কঠিন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছেন। একাডেমি থেকে বাংলাদেশের জন্য প্রতিভাবান ফুটবলার তৈরির স্বপ্ন তিনি দেখেন নিত্য।

বসুন্ধরা কিংস ইমরুল হাসানের নিজ হাতে গড়া বললেও ভুল হবে না। সভাপতির বিচক্ষণতার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে বসুন্ধরা পরিবারের। খোদ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ার‍ম্যান জনাব আহমেদ আকবর সোবহান ক্লাবের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন , জানিয়েছেন ইমরুল হাসান। যা ইমরুল হাসানকে নানাবিধ বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহস যোগায়।

ইমরুল হাসান বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি। দেশের ফুটবল নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হতে চান। চান বসুন্ধরা কিংসের অনুসরণে দেশের অন্যান্য ক্লাব জেগে উঠুক। তারাও চেষ্টা করুক, সমর্থকদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে। চেষ্টা করুক বিগ-বাজেটে দল গড়ে বসুন্ধরার প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠতে। এতে দেশের ফুটবলের মঙ্গল।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক। 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






● সর্বশেষ সংবাদ  
● সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
অনুসরণ করুন
     
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল
প্রকাশক: স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড-এর পক্ষে মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক আবরন প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24[at]gmail.com, info[at]swadeshpratidin.com
● স্বদেশ প্রতিদিন   ● বিজ্ঞাপন   ● সার্কুলেশন   ● শর্তাবলি ও নীতিমালা   ● গোপনীয়তা নীতি   ● যোগাযোগ
🔝