পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার সর্বনাশা পায়রার করাল গ্রাসে ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয়হীন বসবাস করছেন। এরমধ্যে বেশকয়েকটি পরিবার ৩-৪ বার বসতঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হয়নি। পায়রার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে সবকিছু।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহেরচরের পায়রার তীরের মানুষের হাহাকার। তাদের বসতভিটা, গাছপালা, পুকুর, ২টি মসজিদ, ১টি মন্দির, রাস্তা-ঘাট, টিউবওয়েলসহ সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
আ: রাজ্জাক, সুধীর পাইক, বিনয় পাইক ও পারুল বেগমসহ ভুক্তভোগীরা জানান, বিগত কয়েক বছর যাবত এই ভয়াল পায়রার থাবায় সবকিছু হারিয়ে আশ্রয়হীন জীবনযাপন করছি। নদীর ভাঙন দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ঘরবাড়িসহ পুকুর ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত চারবার বসতঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হয়নি। আমাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মন্দিরও হারিয়েছি। এমনকি গভীর নলকূপও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কারণে সুপেয় পানি পর্যন্ত পান করতে পারছি না। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।
এছাড়াও, দ্রুত তাদের ওই গ্রামকে বাচাঁতে এবং সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছেন এসব ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহিন গাজী বলেন, পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে অর্ধশত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন তারা পাড়া প্রতিবেশীর বাড়িতে, রাস্তার পাশে, খাস জমিতে ছাপড়া (ছাউনি) দিয়ে কোন রকম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ গোলাম মর্তুজা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে গতবছর ২২ হাজার জিও ব্যাগ ভাঙন কবলিত স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল। যা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অতি সামান্য, তাই সেগুলো কোন কাজেই আসেনি।
তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আবেদনপত্র নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথেও দেখা করেছি। অদ্যবধি তাঁদের পূনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। তিনি আরো জানিয়েছেন, অনতিবিলম্বে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে গ্রামটি নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে।
দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পার্শবর্তী সরকারি খাসজমিতে থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছি এবং পরবর্তীতে তাদের পুনর্বাসনের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্প করা হচ্ছে। সেটির কাজ সম্পূর্ণ হলে সেখানে একজন কনসালটেন্ট থাকবেন, যার পরামর্শ অনুযায়ী নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন সহ যাই প্রয়োজন হবে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, এই বিষয়টির জরুরী সমাধানের লক্ষ্যে অলরেডি আমাদের একটি টেন্ডার পাশা হয়েছে এবং তার ঠিকাদারও ঠিক হয়েছে। সেখানে ৬শ মিটারের মধ্যে ৫০ হাজার জিও ব্যাগ স্থাপন করা হবে। তবে, জিও ব্যাগগুলো যেন টেকসই হয় সেই লক্ষ্যে বৃষ্টি কমলে বা বৃষ্টির সীজন শেষ হলে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
প্রকাশক: স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড-এর পক্ষে মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক আবরন প্রিন্টার্স, মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24[at]gmail.com, info[at]swadeshpratidin.com