হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) নবাগত শিক্ষার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে র্যাগিং প্রতিরোধে সোচ্চার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গ্রহণ করা হয়েছে নানাবিধ পদক্ষেপ।
'র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা-২০২১' যা বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান-এর সময়কালে কার্যকর হয়। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে হাবিপ্রবি প্রশাসন।
র্যাগিং এর মতো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাবিপ্রবি প্রশাসন স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আগমনের আগেই সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।ইতিমধ্যে হাবিপ্রবির ৯ টি ফ্যাকাল্টিতে স্ব-স্ব ডীনের নেতৃত্বে এবং চেয়ারম্যানগণের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ এবং ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যাগিং এর কুফল সম্পর্কে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি র্যাগিং একটি অপসংস্কৃতি তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া সকল শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক র্যাগিং প্রতিরোধে এগিয়ে আসবেন।
এদিকে গত ২১ আগস্ট (সোমবার) ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৪৫ টি বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ ও গ্রুপ রিপ্রেজেনটেটিভদের জন্য "এন্টি র্যাগিং এক্টিভিটিস এন্ড একাডেমিক কাউন্সিলিং ফর দ্যা স্টুডেন্টস্ অফ এইচএসটিইউ" শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশীদ এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুব হোসেন। এছাড়াও গত ১৪ আগস্ট (সোমবার) বেলা সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ ভবনের ৩০২ নম্বর রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির নেতৃত্বে র্যাগিং বিরোধী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি একাডেমিক ভবনের সামনে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে র্যাগিং এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যানার এবং ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। একই সাথে র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করার পক্ষে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে বলা হয়েছে র্যাগিং এর সাথে কোনো শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে 'র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা ২০২১' অনুযায়ী শাস্তিপ্রাপ্ত হতে হবে। র্যাগিং অপরাধে যে সব শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা হলো ১) সতর্কতা, ২) বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষা কার্যক্রম হতে সাময়িক বহিষ্কার, ৩) শিক্ষা কার্যক্রম হতে স্থায়ী বহিষ্কার, ৪) আবাসিক হল হতে সাময়িক বহিষ্কার, ৫) আবাসিক হল হতে স্থায়ী বহিষ্কার, ৬) ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশীদ বলেন, "র্যাগিং একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তবুদ্ধি এবং জ্ঞানচর্চার অবাধ ও স্বাধীন জায়গা। এখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের জ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হয়ে নিজেকে যোগ্য এবং দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। এরূপ বিদ্যাপীঠে র্যাগিং এর মতো অপসংস্কৃতির স্থান নেই। র্যাগিং এর মতো অপসংস্কৃতির চর্চা থেকে বেড়িয়ে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং স্নেহের। জুনিয়র শিক্ষার্থীদের পরিচয় পর্বের নামে সিনিয়র শিক্ষার্থী কতৃর্ক র্যাগিং দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে র্যাগিং এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। যারা র্যাগিং দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে আমরা সোচ্চার।"
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, র্যাগিং একটি ফৌজদারি অপরাধ। র্যাগিং নির্মূলের অংশ হিসেবে আমরা র্যাগিং বিরোধী কাউসিলিং এর ব্যবস্থা করেছি। ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির সাথে র্যাগিং প্রতিরোধে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের অভিযোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি সেগুলোর সমাধানে সর্বদাই সচেষ্ট আমরা।
সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়াছিন প্রধান বলেন, "র্যাগিং এর ফলে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মনে সিনিয়র শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্মায়। তাই র্যাগিং প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা একান্ত কাম্য।"
উল্লেখ্য, র্যাগিং হলো নবাগত বা জুনিয়র শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে বিব্রত করা, ক্ষতি করা, অপমান করা, শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করা ও আক্রমনাত্মক ব্যবহার করা। কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা বা লেখা যা খারাপ কোন কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে, উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, হুমকি দেওয়া ইত্যাদিকে মৌখিক র্যাগিং বলা হয়। কাউকে কোন কিছু দিয়ে আঘাত করা, চড়-থাপ্পর মারা, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেয়া, থুথু মারা, বেঁধে রাখা, কোন বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসিয়ে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া অথবা বাধ্য করা, কারো কোনো জিনিপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে ফেলা, মুখ দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করাকে শারীরিক র্যাগিং বলা হয়। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক র্যাগিং, সাইবার র্যাগিং, সেক্সুয়াল র্যাগিং, জাতিগত র্যাগিং।
প্রকাশক: স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড-এর পক্ষে মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক আবরন প্রিন্টার্স, মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24[at]gmail.com, info[at]swadeshpratidin.com