মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০ আশ্বিন ১৪৩০

শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করলেন কুবির রাফি
মোহাম্মদ রাজীব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: রোববার, ৩০ জুলাই, ২০২৩, ২:০৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

আল-আরাফাত আমিন রাফি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি আত্মকর্মসংস্থানের জন্য  পরিচালনা করছেন  একটি লাইব্রেরি। শিক্ষার্থীদের সুলভ মূল্যে সেবা প্রদানের জন্য ক্যাম্পাস সম্মুখে  রাফি এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার নাম আল-রাফি লাইব্রেরি। লাইব্রেরিতে  বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগের একাডেমিক বই পাওয়া যায়। পাশাপাশি  নন একাডেমিক বইয়ের ফরমায়েশ নেওয়া হয় এবং সর্বোচ্চ কম সময়ের মধ্যে সুলভ মূল্যে পাঠকের কাছে বই পৌঁছানো হয়। এছাড়াও খাতা-কলম,বই, ফটোকপি ও  বিভিন্ন স্টেশনারিসহ যাবতীয়  জিনিসপত্র পাওয়া যায় তার লাইব্রেরিতে।

নিত্যদিনের ক্লাস, এসাইনমেন্ট, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সামলে বাকি সময়ে নিজের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানে সময় দিচ্ছেন। রাফির একার পক্ষে ব্যবসায়টি সামলানো সম্ভব না হওয়ায়  একজন স্টাফ নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে দোকান হওয়ার কারণে  জুনিয়র, ব্যাচম্যাট ও সিনিয়র সকলের আগমন ঘটে রাফির দোকানে। 

রাফির গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার সদর উপজেলায়। তবে তার বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়। রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের  মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কলেজ জীবন থেকেই শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় তিনি ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করতেন। তার ইচ্ছে ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। এবং সেটির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দেড় বছর পর।

মহামারি করোনা থাকাকালীন সময়ে রাফি IELTS (আইইএলটিএস) সম্পন্ন  করেছেন। তার IELTS (আইইএলটিএস) স্কোর ছিল ০৭। এরপর তিনি IELTS (আইইএলটিএস)  এর বেশকিছু স্টুডেন্ট পড়িয়েছেন। টিউশন করিয়ে যে অর্থগুলো জমিয়েছেন সেগুলো  এবং পরিবারের কাছ থেকে বেশ কিছু অর্থ নিয়ে তিনি এ ব্যবসায়টি দাড় করিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়,  রাফির লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা অন্যান্য লাইব্রেরিগুলোর তুলনায় অনেকটা বেশি। সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে লাইব্রেরিটি। এমনকি  বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতেও তার লাইব্রেরি খোলা পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনডেগুলোতে তার দোকানে প্রচুর ভীর লেগে থাকে। সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র সবাই রাফির উদ্যোগটিকে  ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।

ক্যাম্পাসে লাইব্রেরি দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাফি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কিছুদিন  ক্লাস করার পর  স্যার কিছু বই কেনার কথা  বলেন। তাই  ক্যাম্পাসের  সম্মুখের দোকানগুলোতে  বই খুঁজতে যাই,  কিন্তু সেখানে বই না পাওয়ায় আমি রীতিমতো অবাক হয়। পরবর্তীতে কুমিল্লা শহর থেকে বই সংগ্রহ করি। ক্যাম্পাস থেকে শহরে আসা যাওয়াতে ১০০ টাকা খরচ হয়।  দুঃখের বিষয়  শহরের  দোকানেগুলোতে সকল বই পাওয়া যায় না। যা আমাকে ব্যথিত করেছে এবং সেই কথা মাথায় রেখে বইয়ের দোকান দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রথমে অনলাইনে বই বিক্রি করা শুরু করি। শহর থেকে অনেক কম দামে বই বিক্রি করার কারনে ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। ধীরে ধীরে একটি দোকান খুলার পরিকল্পনা করি। তাই প্রাথমিকভাবে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করলাম যেহেতু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে কোনো বইয়ের দোকান নাই। আমি স্বল্পলাভে শিক্ষা উপকরণ বিক্রি করি। ক্যাম্পাসে যারা অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা আছেন, তাদের কাছে আমি কেনা দামে বই বিক্রি করে থাকি। 

রাফি জানান, আমি সবসময় চেয়েছিলাম নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। বাবা-মা আমাকে ছোট বেলা থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছে। আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। আমি এখন  বড় হয়েছি তাই নিজের খরচের বোঝা পরিবারের উপর চাপাতে চাই না। এজন্য আমি আত্মকর্মসংস্থানের এ পথটি বেচে নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, প্রথম দিকে দোকান দেওয়া নিয়ে বাবা  কিছুটা দ্বিমত পোষণ করলেও পরবর্তীতে বাবা-মা দুজনই আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের সমর্থন পেয়ে উৎসাহিত হয়ে আমি  দোকানটি দিয়েছি।

দোকানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে  রাফি জানায়, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি সমৃদ্ধশালী বইয়ের দোকান দিতে চাই যেখানে দেশের সকল প্রকার বই বিক্রি করা হবে।  শুধু লাভের জন্য নয় শিক্ষার্থীরা যেন নিজ ক্যাম্পাস থেকে খুব সহজেই  বই কিনতে পারে এটাই আমার মূল উদ্দেশ্য।

রাফির  উদ্যোগটিকে প্রশংসা করে সহপাঠী ফয়সাল ইসলাম বলেন, রাফির আত্মকর্মসংস্থানের এ বিষয়টিকে আমরা সবাই ইতিবাচকভাবে দেখছি। অতীতে বইয়ের জন্য আমাদের শহরে যেতে হতো, এখন ক্যাম্পাস থেকেই  কিনতে পারি। আমাদের অতীতের কষ্ট অনেকটা লাগব হয়েছে।  তিনি আরো বলেন,  'নিজ ডিপার্টমেন্ট এর একজন বন্ধুকে  আত্মনির্ভরশীল হিসেবে দেখতে পেয়ে নিজেকে গর্ববোধ করছি।  হয়তো আমরা সবাই একদিন ভাল একটি পজিশন এ যাবো, তবে নিজের চোখে  ডিপার্টমেন্টের  বন্ধুর এমন সফলতা  দেখা সত্যিই আনন্দের ও গর্বের বিষয়। আমি রাফির  উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।'

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী
প্রকাশক: স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড-এর পক্ষে মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক আবরন প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24@gmail.com, info@swadeshpratidin.com
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী
প্রকাশক: স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড-এর পক্ষে মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক আবরন প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।