কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পরীক্ষা দিয়েই ফার্স্ট ক্লাস
শাহাদৎ হোসেন, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
|
![]() ড. মাসুদ রানা >> মুখোমুখি কমিটির প্রধান ও সদস্যরা >> দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে : বিভাগীয় প্রধান >> একাডেমিক কমিটি সতর্ক করেছে মাসুদকে: বিভাগ প্রধান >> এক স্বাক্ষরে সংশোধন >> স্বাক্ষর করেননি ৩ শিক্ষক >> সংশোধনের কারণই জানেননা ৩ সদস্য >> ইভিনিং নিয়েই ব্যস্ত মাসুদ >> সংশোধনের নামে তথ্য লোকানোর অভিযোগ মাসুদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সেমিস্টার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে শিক্ষার্থীকে পাস করতে হয় সকল বিষয়ে। যেখানে প্রতি সেমিস্টারে থাকে ৫ টি ভিন্ন কোর্স। তবে ৪টি কোর্সের পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই এক শিক্ষার্থীকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে দেখা গেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে। উত্তীর্ণ হওয়া স্নাতকোত্তর শ্রেণির সেই শিক্ষার্থী ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায়। চলতি মাসের ৩ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুল হালিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতকোত্তর শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেই শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাসুদ রানা। এছাড়া সেই পরীক্ষা কমিটির অন্য ৩ সদস্যরা হলেন একই বিভাগের দুই সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ মিলন ও রিমন সরকার এবং অন্যজন হলেন বিভাগটির প্রভাষক মোঃ আল আমিন। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার সকল কোর্সের নম্বর প্রদানের পর তা জমা হয় পরীক্ষা কমিটির কাছে এবং সেই কমিটি ফলাফল প্রকাশে কাজ করে। তবে সকল তথ্য সংরক্ষণ ও চূড়ান্ত ফলাফল তৈরী করেন পরীক্ষা কমিটির প্রধান। তবে সেই ফলাফলে পরীক্ষা কমিটির প্রধান সহ সকল সদস্যের স্বাক্ষর থাকতে হয়। ফলাফলে কোন ভুল থাকলে সেটির সংশোধন করতে হলেও সেখানে কমিটির প্রধান সহ সকল সদস্যের স্বাক্ষর থাকার নিয়ম রয়েছে। তবে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে দেখা গেছে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে। স্বদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, পরীক্ষা কমিটির প্রধান মাসুদ রানা ২১১৩২৭৫০৬ রোলধারী শিক্ষার্থীর ফলাফলে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ দেখিয়েছেন যেখানে সেই শিক্ষার্থী মাত্র একটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ফলাফল প্রকাশের পর সমালোচনার সৃষ্টি হলে ফলাফল সরিয়ে ফেলে বিভাগটি। এরপর সংশোধনের জন্যে পুনরায় পাঠানো হয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে। তবে সংশোধনের নামে তথ্য লোকানোর অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষা কমিটির প্রধান ড. মাসুদ রানার নামে। পরীক্ষা কমিটির অন্য সদস্যদের স্বাক্ষর না নিয়েই সংশোধনের জন্যে ফলাফল পাঠান কমিটি প্রধান। কি ধরনের সংশোধন করা হয়েছে সেটিও জানেনা কমিটির অন্য ৩ সদস্য। অন্যদিকে স্বাক্ষর না নিয়েই সংশোধনের জন্যে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন পরীক্ষা কমিটির প্রধান। অনুসন্ধানে জানা যায় এর আগেও এই শিক্ষক একাধিকবার ফলাফল প্রকাশে এমন ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসেন এবং স্বীকার হোন সমালোচনার। স্বদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে উঠে আসে আরো বেশ কিছু তথ্য। এই শিক্ষক অন্য আরেক শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ইনকোর্সের নাম্বার প্রদানেও এমন করেছিলেন। ৫ বার সংশোধন করে ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন। নম্বর মূল্যায়নেও অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ইনকোর্সে ৫ ধাপে ৪০ নম্বর বন্টনের কথা থাকলেও তিনি ৪ ধাপে নম্বর প্রদান করেছিলেন। যার কারণে ফলাফলেও এসেছিলো পরিবর্তন। এই তথ্য বাইরে চলে আসলে তা সরিয়ে ফেলতেও বাধ্য হয়েছিলেন সেই শিক্ষক। এছাড়া একাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিলেও তাদের নম্বর প্রদান করা হয় সেই নম্বর পত্রে যেটির তথ্য চিত্র হাতে রয়েছে স্বদেশ প্রতিদিনের। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মাসুদ রানা বলেন, এমন কোন কিছু হয়নি পূর্বে। হলেও সেটি আমার জানা নেই। বারবার এমন ঘটনাকে দায়িত্বে অবহেলা এবং কখনো কখনো ইচ্ছাকৃত বলেও মন্তব্য করেছেন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক। তিনি আরো বলেন (মাসুদ রানা) উনি সপ্তাহের বেশীর ভাগ সময়ই বিভাগে না আসলেই ইভিনিং এমবিএ তে ঠিকই সময় দেন। তাড়াহুড়ো করে তো আর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয় না। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন মাসুদ রানা। চলতি মাসের ৩ তারিখে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল পুনরায় সংশোধনের জন্যে পাঠায় পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। প্রেরিত ফলাফলে নিয়মের ব্যত্যয় থাকলেও তা না দেখেই উপাচার্যের অনুমোদনের জন্যে প্রেরণ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। এই নিয়ে দপ্তরটির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, এমন ভুল হবার কথা না আর যদি হয়ে থাকে তবে তা অনিচ্ছাকৃত। অনেক ফাইল আসে সেখান থেকে ভুলে হয়ে যেতে পারে। তবে ভুল হলে অবশ্যই তা বাতিল করা হবে। ফলাফল সংশোধনের বিষয়ে কমিটির প্রধান এবং অন্য ৩ সদস্যের বিপরীত অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। কমিটির প্রধান মাসুদ রানা বলেন অন্য সদস্যদের জানিয়েই সংশোধনের জন্যে পাঠানো হয়ে। তবে জানানোর বিষয়ে অস্বীকার করেছেন কমিটিতে থাকা অন্য ৩ শিক্ষক। স্বদেশ প্রতিদিনের কাছে ৩ শিক্ষক বলেন, ফলাফল সংশোধনের বিষয়ে তারা অবগত নন। এমনকি জানেনও না কি রকম সংশোধনী কমিটি থেকে প্রেরণ করা হয়েছে। কমিটির প্রধান জানানোর কথা বললেও সংশোধনের জন্যে প্রেরিত ফলাফলে কোথাও অন্য সদস্যদের স্বাক্ষর নেই। বিভাগ সূত্রে জানা যায় সংবাদের জন্যে বক্তব্য চাওয়ার পরপরই আজ জরুরী সভার আহবানও করেছে সেই পরীক্ষা কমিটির প্রধান ড. মাসুদ রানা। এবিষয়ে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, আমি অবগত ছিলাম না না জানিয়ে সংশোধনের বিষয়ে। তিনি(মাসুদ রানা) এর আগেও এমন ভুল করেছিলেন বিভাগ থেকে নোটিশ করাও হয়েছিলো। পুনরায় এমন হয়ে থাকলে সেটি দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজ হবে। এসকল কাজ সঠিক ভাবে না করলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাছাড়া একাডেমিক কমিটির সভায় তাকে সতর্কও করা হয়েছিলো। ফলাফল প্রকাশে অনিয়মের বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |