বর্তমান যুগে ভালোবাসার পরিণতি যা হয়
এইচ এম ইমরান হোসাইন
|
![]()
এই ভালোবাসার মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে আনন্দে-উল্লাসে বাঁচতে পারে। এই ভালোবাসার জন্যে কেউ কেউ আবার পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেয়। কেউ কেউ আবার ভালোবাসার জন্য পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে। তাই ভালোবাসাকে জীবন এবং মৃত্যু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করায় যায়। ভালোবাসাকে ঘিরে মানুষের কতনা জল্পনা-কল্পনা, আনন্দ-বেদনা। প্রতি বছর ভালোবাসা দিবস আসলেই দেখা যায় ভালোবাসার মানুষদের উন্মাদনা। এ দিনটিতে শুধু তরুণ-তরুণীরাই উন্মাদ হয়ে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায় না বরং অনেকে আছে যারা নিজের বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, সন্তান-সন্ততি, পরিবার আত্মীয়-স্বজনদের জন্যেও ভালোবাসার বহুমাত্রিক প্রকাশ ঘটায়। এই দিনে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে ভালোবাসা দিবস পালন করে। ভালোবাসার উৎসবে মুখর থাকে রাজধানীর তরুণ-তরুণীরা। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, এ উৎসবের ছোঁয়া লাগে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে প্রেমকথার উচ্ছ্বাস ফুটে ওঠে পল্লবিত। অনেক মানুষই মনে করেন, ভালোবাসা দিবসে তরুণ-তরুণীরা জুটি খুঁজে বাসা বাঁধে। এ দিনে চকলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেমবার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, জড়াজড়ি করা খেলনা মার্জার অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। তবে একদিকে যেমন মানুষকে ভালোবাসার উন্মাদনায় পাগল হতে দেখা যায়, অপরদিকে এই ভালোবাসা অনেকের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ভালোবাসাকে মৃত্যু বলে সম্বোধন করার অন্যতম কারণ হলো এই ভালোবাসার প্রিয় মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে না পেয়ে অনেকেই নিজের জীবন শেষ করে দেয়। আমাদের দেশে এভাবে জীবন শেষ শেষ করে দেওয়ার ঘটনা কম নয়। যৌবনকালে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসা প্রস্ফুটিত হয়। যার ফলে তরুণ-তরুণীদেরকে এই বয়সে একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে মনের আদান-প্রদান দেখা যায়। হয় প্রেমবিচ্ছেদ। এতে কেউ কেউ ভালোবাসার মানুষকে হারানোর বেদনায় আত্মহত্যা করে। এছাড়াও ভালোবাসার বিভিন্ন খারাপ প্রভাব আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এমনকি পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আসুন এর কিছু উদাহরণ জেনে নিই- ১. স্বাধীনতা হারানো: অবশ্যই ভালোবাসার মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হবে। আমরা সকলেই চাই আমাদের ভালোবাসার প্রিয় মানুষটি আমার মত হোক। আমার মত করে পছন্দ-অপছন্দগুলো সাজিয়ে নিক। এটাতেই স্বাধীনতা ভুলন্ঠিত হতে দেখা যায়। যার ফলে খুব সহজেই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। ২. অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা: বর্তমান যুগের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। খুব সহজেই তারা একে অপরকে ভালোবাসে। কাছে আসতে শুরু করে। আর এতেই ভালোবাসার ঘনত্ব বাড়ার আগেই ঘনিষ্ঠতায় সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। ৩. প্রিয় মানুষটিকে কিছু না বলা: মাঝে মাঝে অতিরিক্ত ভালবাসা কারণে আমরা আমাদের সঙ্গীকে কোনো কিছু বলি না। এমনকি কোনো অন্যায় করলেও সংশোধন করে দেই না। আর এই বিষয়টি সম্পর্ককে পানসে করে দেয়। ভালোবাসার সম্পর্ক হয় মান-অভিমান নিয়ে। ভালোবাসার মধ্যে মান অভিমান খুনসুটি আপনার ভালবাসাকে আরও মজবুত করবে। আবার অতিরিক্ত খুনসুটিই মাঝে মাঝে সম্পর্ক নষ্টের কারণ হয়। ৪. একাধিক প্রেমেরে সম্পর্ক: একাধিক প্রেমের সম্পর্ক এখনকার যুবক-যুবতিদের জন্য আর্টে পরিণত হয়েছে। খুব কম তরুণই আছে যারা একজন প্রিয় মানুষকেই ভালোবাসে। এমন একাধিক সম্পর্কের কারণে ভালোবাসার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকে না। থাকে শুধু যৌনতৃপ্তি। এর ফলে অনেক প্রেমিক যুগলকে সমাজে নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। ফলে এই ভালোবাসার কারণেই অকালে ঝড়ে যায় দেশের ভবিষ্যত মেধাবী তরুণ-তরুণীরা। ৫. সামাজিকভাবে ঘৃণা: পবিত্র ভালোবাসাকে পুঁজি করে অনেকেই যৌন আসক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এমন সম্পর্ক বেশি পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে সমাজ এমন ভালোবাসার সম্পর্ককে মেনে নিতে চায় না। এতে তরুণ-তরুণীরা সামাজিকভাবে হেয় হয়। এর প্রভাবে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয়। এজন্য বলতে হয়, ভালোবাসা নামক চমৎকার অনুভূতি বাঁচতেও শেখায়, মরতেও শেখায়। ৬. পারিবারিকভাবে গ্রহণ না করা: বেশিরভাগ সময় যুবক-যুবতিদের ভালোবাসার সম্পর্ককে তাদের পরিবার মেনে নেয় না। এ কারণে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মহত্যা করে নিজের জীবন শেষ করে দেয়। লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |