ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
লেখাপড়া শেষ করে প্রভাষক হতে চেয়েছিলেন লিমন
শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি
|
লেখাপড়া শেষ করে প্রভাষক হতে চেয়েছিলেন লিমন চোখে পানি নিয়ে কথা গুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ওপর থেকে পড়ে নিহত শিক্ষার্থী লিমন কুমার রায়ের মা লিলা রানী রায়। এর আগে বুধবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ১০তলার ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় লিমন। সকাল সাড়ে ১০টায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লিমন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাগুড়া দোলা পাড়া এলাকার প্রতাপ চন্দ্র রায়ের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইইআর) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন জগন্নাথ হলের সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের একটি কক্ষে। লিমন ২০১৭ সালে মাগুড়া শিঙ্গের গাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৯ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। দুই পরীক্ষাতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন তিনি। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন লিমন। লিমন সব সময় মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করতেন। করোনাকালে লকডাউনের সময় গ্রামের বাড়িতে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি একটি পাঠশালা গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতেন। লিমনের গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, তার বাবা- মা আহাজারি করছেন। আত্মীয়-স্বজনও শোকে মূহ্যমান। তার মৃত্যুর খবরে তার বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। কান্নাজড়িত কন্ঠে লিমনের বাবা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, কি আর বলবো ছেলেকে তো কষ্ট করে লেখাপড়া শিখাইতেছি পরিশ্রম করতেছি। সরকারের কাছে দাবি আরো তো একটা ছেলে একটা মেয়ে আছে ওদেরকে যেনো কিছু সহোযোগিতা করে এটাই আমার সরকারের কাছে আশা। লিমনের ছোট ভাই সুমন চন্দ্র রায় বলেন, সকালে স্কুলে যাওয়ার পর দাদা বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে খবর জানায় যে দাদা অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি। এটা শোনার পর আর থাকতে পারলাম না স্কুলে তারপর বাড়িতে এসে কিছুক্ষণের মধ্যে শুনি যে দাদা মারা গেছেন। আমার দাদার স্বপ্ন ছিল আমি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হই। ছোট বোনটাকে সে ডাক্তার তৈরি করবে। তা তো আর হলো না। এখন আমরা কিভাবে চলবো। সরকারের কাছে একটা মিনতি আমাদের দিকে একটু দেখেন তাহলে আমাদের দাদার স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে পারবো। প্রতিবেশী নারায়ণ চন্দ্র রায় বলেন, লিমন খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো। তাকে নিয়ে গ্রাম ও তার পরিবারের সবার একটা উচ্চ আকাঙ্খা ।সে মানুষের মতো মানুষ হলে আগামী দিনের গ্রামের সবার মুখ উজ্জ্বল হতো। তার বাবা রিকশা চালিয়ে তার ভরনপোষণ চালাতো। সে ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলো। সবার আশা ছিল লেখাপড়া শেষ হলে তার ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়ায় সমস্যা হতো না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান মিঠু বলেন, লিমনের বাবা খুবেই অসহয় গরিব। রিকশা চালায় তার লেখাপড়ার খরচ চালাতো। তার প্রতি তার বাবা-মায়ের অনেক আশা ছিলো। সে লেখাপড়া শেষ করে সংসারের হাল ধরবে। তার মধ্যে তো এই দুর্ঘটনাটা ঘটে গেলো। আজ সকাল সাড়ে ১০ টায় খবরটা শুনে এখানে ছুটে আসছি। চেষ্টা করছি মরদেহটা অক্ষত অবস্থায় তার মরদেহটা গ্রামে নিয়ে আসার। তার পরিবারের পাশে আমি সবসময় আছি। পাশাপাশি সরকার এই অসহায় পরিবারটিকে একটু দেখে। স্বদেশপ্রতিদিন/ইমরান
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |