স্বল্প সুদে ঋণ দিবেন বলে প্রয়োজনীয় কাজগপত্র ছবি ও স্বাক্ষর নিয়ে গৃহিতাকে ঋণের টাকা দেওয়া হয়নি। ঋণের টাকা না নিয়েও এখন ঋণগেলাপির তালিকায় গৃহিতার নাম। আবার কেউ একবার ঋণ নিয়ে তা পরিশোধও করেছেন কিন্তু খাতা-কলমে টাকা পরিশোধ হয়নি। এখন ব্যাংকের চাপে এলাকা ছাড়া হতদরিদ্র পরিবারগুলো। পটুয়াখালীর বাউফলে বেসরকারি সংস্থা স্বনির্ভর বাংলাদেশ নামের এনজিওর এমন জালিয়াতির ও প্রতারণায় শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অর্ধশত পরিবার। উপজেলার সদর ইউনিয়নের হোসনাবাদ কেন্দ্রে লোন বিতরণের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে অগ্রণী ব্যাংকের বাউফল শাখা স্বনির্ভর বাংলাদেশ এনজিওকে লোনের জন্য অর্থায়ন করে। এই অর্থ দিয়ে স্বনির্ভরের ক্ষুদ্র লোন দেওয়ার কথা ছিল অসহায় শতাধিক পরিবারকে। সেই পরিবারগুলো লোনের টাকা সম্পুর্ন হাতে না পেলেও দলিল দস্তাবেজে লোনের সম্পুর্ন টাকা উত্তোলনের প্রমান মিলেছে। উপকারভোগীদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা হলেও জমা পরেনি ব্যাংকে। গ্রাহকদের স্বাক্ষর ছবি জাল করে ভুয়া নামে ঋণ উত্তোলনের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে স্বনির্ভর কর্মসূচির দুই কর্মচারী ঘটনার সাথে জড়িত থাকলেও নেওয়া যাচ্ছেনা তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা। সম্প্রতি সেই লোন পরিশোধের জন্য অগ্রনী ব্যাংক বাউফল শাখা চাপ প্রয়োগ করলে বিপাকে পরে যায় মানবেতর জীবনযাপন করা পরিবারগুলো।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্বনির্ভরের ততকালীন মাঠকর্মী নাজমা বেগম তাদেরকে সদস্য করেন এবং লোন দেয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয় পত্রের ছায়ালিপি ও ছবি জমা নেয়। কিছুদিন বাদে ওই ব্যাংকের নিচে আসতে বলেন এবং সেখানে তাদের স্বাক্ষর রেখে পাঠিয়ে দেন। প্রথমবারে স্বল্প সংখ্যক সদস্য একবার লোন পেয়ে পরিশোধ করলেও ২য় বার পুনরায় তাদের নামে লোন নেয়া হয়েছে বলে ব্যাংকের কাগজ পত্রে প্রমান মিলে। কিন্তু লোন গৃহীতাদের অভিযোগ, দ্বিতীয়বারে তারা কোন লোন আনেননি এবং প্রথম বারের লোন পরিশোধ করার পরে মাঠকর্মী লোনের পাশ বইও জমা নিয়ে যায়। ঘটনার দীর্ঘ বছর পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিবারগুলোকে চাপ সৃষ্টি করলে তারা জানতে পারে তাদের নামে পুনরায় লোন আনা হয়েছিলো।
অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ সদস্যকে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে নিয়ে সদস্য করা হয়েছে। সদস্যের তালিকায় নাম রয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও। যাদের অধিকাংশদের নামের সাথে ছবি ও স্বাক্ষরের মিল নেই। ভুক্তভোগী মদনপুরা ইউপির রওশনআরাকে সদর ইউপির হোসনাবাদ কেন্দ্রে সদস্য করা হয়।
তিনি জানান, মাঠকর্মী নাজমা বেগম তাকে সদস্য করার কথা বলেন এবং লোন দেয়ার আশ্বাস দেন। এরপর তার থেকে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নেন। এর কিছুদিন পরে নাজমা বেগম তাকে বাউফল অগ্রণী ব্যাংকের নিচে ডাকেন। সেখানে গেলে একটি স্বাক্ষর রেখে অপেক্ষা করতে বলেন। সকাল গড়িয়ে বিকেল হলে তাদেরকে বলেন চলে যেতে, কাজ হবে না। এর দীর্ঘ বছর পরে কিছুদিন আগে তিনি জানতে পারেন ব্যাংক টাকা পাবেন তার কাছে। তাও আবার যে টাকা তিনি নেননি সেই টাকার পরিমাণের সুদে আসলে তিনগুন অর্থাৎ ত্রিশ থেকে আশি হাজার দিতে হবে বলে দাবি করছে অগ্রনী ব্যাংক। দীর্ঘ সময় লোন পরিশোধ না করায় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সুদ যোগ হয়েছে।
একই অভিযোগ করে ভুক্তভোগী হানিফ হাওলাদার বলেন, আমার বাড়িতে স্বনির্ভরের কেন্দ্র ছিল। লোন নেওয়ার পরে সেটি পরিশোধ করে দিয়েছি। সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংক বাউফল শাখায় দায়িত্বরত স্বনির্ভরের লোন বিতরণ কর্মকর্তা আব্বাস সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে জানায় আমার নামে লোন আছে, টাকা দিতে হবে। আমি তাকে জানাই টাকা পরিশোধ করেছি। তখন আমাকে বলেন, “ আপনার নামেই লোন আছে এবং অনেক বছর হয়ে গেছে। টাকা না দিলে আপনার নামে মামলা হবে।” আমি এই লোনের বিষয় আদৌ কিছু জানিনা। পুলিশ আতংকে এখন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র দিনমজুরী কাজ করছি।
মদনপুরা ইউপির লিপি বেগম জানান, আমার নামে ১০ হাজার টাকার লোন দেখানো হয়েছে। কিন্তু লোনের বিষয় কোন কিছু না জানলেও ব্যাংক এখন আমার কাছে তিনগুন টাকা দাবি করছে।
এ বিষয়ে স্বনির্ভরে দায়িত্বরত নাজমা বেগম জানান, এসব ঘটনার বিষয়ে আমি (নাজমা) কিছু জানিনা। অফিসের আদেশে আমি কাজ করছি। অগ্রণী ব্যাংক বাউফল শাখা ব্যবস্থাপক আরিফ রশিদ জানান, স্বনির্ভরের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্বল্প সুদে লোন দেওয়া হয়েছিল; আমরা শুধু সরকারের নির্দেশ মতো কাজ পরিচালনা করেছি। তবে সারাদেশেই স্বনির্ভর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।