মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
ডোমারে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, অর্ধকোটি টাকা লেনদেন
ডোমার প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:০০ পিএম আপডেট: ০৯.০৯.২০২২ ৬:২৮ PM
ডোমারে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, অর্ধকোটি টাকা লেনদেন

ডোমারে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, অর্ধকোটি টাকা লেনদেন

নীলফামারী জেলার ডোমারে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫টি কর্মচারী পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উক্ত বিদ্যালয়ের ৫ জন চাকুরীপ্রার্থী।

এ বিষয়ে তারা বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলমের কাছে লিখিত আবেদন করেন। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাকেরিনা বেগমের কাছে। তবে অভিযোগ দিলেও বৃহস্পতিবার রাতেই ডিমলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৫টি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও সরকারি নির্দেশনা রয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য নিদ্রিষ্ট সময়ের পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

এদিকে কমিটির সভাপতিকে টাকা দিয়েও চাকুরী না হওয়ায় উক্ত বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বদরুল আলমের মেয়ে লুৎফন নাহার বন্নী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, নীলফামারীর ডোমারে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫টি কর্মচারী পদে অর্ধকোটি টাকারও বেশি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠায় এবং নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা আত্মসাত করার লক্ষে বিদ্যালয়ের সভাপতি ফিরোজ চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষক রমনী রায়ের যোগ সাজশে ডোমারে পরীক্ষা না নিয়ে ডোমার থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে ডিমলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করেন। পরীক্ষার দিন বৃহষ্পতিবার সকালে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. রমিজ আলমের কাছে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বন্ধের আবেদন করেন ৫ জন চাকুরীপ্রার্থী।

পরীক্ষা বন্ধের আবেদন জানানো প্রার্থীরা হলেন, ফজলে রাব্বী, সাহিনা আক্তার বানু, মো. শাহ আলম চৌধুরী, মো. যুবায়ের ইসলাম ও সাহেব আলী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মিসহ পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গোপনে টাকা নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। পরিচালনা কমিটি পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থনে লোক দেখানো প্রতিযোগীতার জন্য নিজ নিজ দামি পরিক্ষার্থী ঠিক করে।

৮ সেপ্টেম্বর বিকালে পাশ্ববতী ডিমলা উপজেলায় সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরিক্ষা নেয়ার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেন। নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের প্রার্থী ছাড়া অন্যেদের পরিক্ষার কথাও জানাননি। তাই তারা নিয়োগ পরীক্ষাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন জানানো পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেন। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলার পরও উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার ৫ চাকুরী প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়টি উপেক্ষা করেই সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়েই পরীক্ষা নিতে তৎপর হয়ে পরেন এবং সন্ধার পর পরীক্ষা নেয়া শুরু করেন। লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল শুনে আয়া পদের লুৎফুন নাহার বন্নী নামে এক পরিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে স্বজনরা দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। লুৎফুন নাহারের পরিবারের দাবি টাকা দিয়েও চাকরি না হওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমণী কান্ত রায় জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রেক্ষিতে অফিস সহকারি পদে ২২ জন, কম্পিউটার অপারেটর পদে ৯ জন, অফিস সহায়ক পদে ৬ জন, আয়া পদে ১৩ জন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৯ জন চাকুরী আবেদন প্রার্থীকে লিখিত পরিক্ষার জন্য ডাকা হয়। টাকা নিয়ে নিয়োগের বিষয়টি তিনি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

ভুক্তভুগীদের কাছ থেকে জানা যায়, নিয়োগ দেয়ার কথা বলে একজনের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক রমণী কান্ত নিয়োগের কয়েক মাস আগেই ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং নিয়োগের পর আরও ৫ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। অথচ বেশি টাকা নিয়ে ওই পদে অন্যজনকে চুড়ান্ত করেছে। আরেকজন আয়া পদে নিয়োগের জন্য সভাপতি ফিরোজ চৌধুরীকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। আরও ৩ লাখ টাকা নিয়োগের পর দেয়ার কথা। তিনিও অন্যজনের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে অন্যজনকে চুড়ান্ত করেন। আরেকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে চাকুরী না দেওয়ায় রাতে অসুস্থ হন পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে একাধিক সুত্রে জানা যায়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাকেরিনা বেগম জানান, অভিযোগকারীরা নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে অভিযোগ করেন। তাই এই মূহুর্তে নিয়োগ পরিক্ষা বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে তাদের অভিযোগটি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম ফিরোজ চৌধুরী বলেন, নিয়ম মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে চাপে রাখতে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. রমিজ আলম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্ত‍াকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

স্বদেশপ্রতিদিন/ইমরান

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






● সর্বশেষ সংবাদ  
● সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
অনুসরণ করুন
     
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল
প্রকাশক: স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড-এর পক্ষে মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক আবরন প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24@gmail.com, info@swadeshpratidin.com
● স্বদেশ প্রতিদিন   ● বিজ্ঞাপন   ● সার্কুলেশন   ● শর্তাবলি ও নীতিমালা   ● গোপনীয়তা নীতি   ● যোগাযোগ
🔝