কাটছে না করনাকালীন সংকট
মানবেতর জীবন যাপনে প্রকাশকরা
বই মেলা নিয়ে ধোয়াশা
নূরুল ইসলাম নিরব
|
![]() মানবেতর জীবন যাপনে প্রকাশকরা হুমকির মুখে দেশের পুস্তক শিল্প। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, দোকানগুলোতে নেই বইয়ের বেচা-কেনা। ফলে আর্থিক সংকটে প্রকাশক ও পুস্তক ব্যবসায়ীরা। দোকান ভাড়া এবং কর্মীদের বেতন দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়াও সংসার নামক ঘানি টানতে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দেশের প্রকাশনা শিল্প মালিকরা। এজন্য বই মেলা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান, সরকারের থোক বরাদ্দ এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বই কিনে তাদের বাঁচনোর আহ্বান করছেন প্রকাশকরা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচাতে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় এ শিল্প বিলীন হয়ে যেতে পারে। জানা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারিকালে দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প খাতের প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবছর এ খাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হয়। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ খাতের উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বর্তমানে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচলনাই অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাবাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বইয়ের দোকান বন্ধ। যেগুলো খোলা হয়েছে সেগুলোতে বেচা-বিক্রি কম। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, করোনায় হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া প্রায় সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেই বই ছাপার কাজ বন্ধ রয়েছে। যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তারাও অনেকটা ধার দেনা করে চলছে। তাছাড়া করোনার কারণে দেশের মোট ৩০ হাজার লাইব্রেরিতে বই বিক্রি ব্যাপকভাবে কমেছে। এ ব্যাপারে পারিজাত প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী তরুণ উদ্যোক্তা ও প্রকাশক শওকত হোসেন লিটন স্বদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের থোক বরাদ্দ থেকে ছোট বড় সকল প্রকাশকদের সমানভাবে সহযোগিতা করা উচিত। অন্যথায় এ প্রকাশনা শিল্প অস্তিত্ব হারাবে। তিনি বলেন, বই মেলা আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। কিন্তু করনার সৃষ্ট পরিস্থিতি এবার বইমেলা হওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। তবে সরকার যদি বইমেলা করতে না চায় তাহলে যেনো প্রত্যেক প্রকাশককে সরকারি বাজেটে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বই কিনে বিভিন্ন দফতর বা কর্মসূচিতে উপহার দেয়। এতে বই বিক্রিও হবে সাথে প্রকাশকরাও বাঁচবে। রাজধানীর নীলক্ষেত বই বাজার ঘুরে জানা যায়, অন্যসময় শিক্ষার্থী ও বই প্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকতো নীলক্ষেত বই মার্কেটে। করোনার কারণে এখন বাজারটি প্রায় ফাঁকা। বেঁচাবিক্রি না থাকায় অলস সময় পার করছেন দোকানিরা। সাধারণ ছুটিতে দীর্ঘদিন বন্ধের পর গত জুনে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে খুলে দেয়া হয় বইয়ের দোকানগুলো। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চীরচেনা রুপে ফেরেনি বই বাজার। এব্যাপারে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে দেশের ৩০ হাজার লাইব্রেরিতে প্রতিদিন গড়ে বই বিক্রি হতো ৩০ কোটি টাকার। কিন্তু এখন বই বিক্রি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকাশক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণ, শুল্ক কাঠামোর সংস্কার, ডিউটি ড্র-ব্যাক পদ্ধতির জটিলতা নিরসন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়াও বিকল্প চিন্তা ভাবনাও করতে হবে। এ ব্যাপারে গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাধারণ বার্ষিক সভায় আধুনিক বা ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকাশনা শিল্পকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যাবে, সে উপায় প্রকাশকদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন,পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের রাতারাতি বড়লোক হওয়ার সুযোগ নেই। এটি একটি অত্যন্ত মহৎ, সৃজনশীল ও মেধা বিকাশের পেশা। মানবসভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়নে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে পুস্তক শিল্পের আকার অনেক বড় হয়েছে। প্রিন্টিং শিল্পও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে এ শিল্পের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমি মনে করি, মুদ্রিত বইপড়া ও কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনে বইপড়ার আনন্দ এক নয়। বই এর আকর্ষণ সবসময়ই থাকবে। তারপরও উন্নত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে মুদ্রিত বই এর আকর্ষণ বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে প্রকাশকদের দৃষ্টি দিতে হবে।
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |