বন্ধ হচ্ছে না মাধবদীর টেটা যুদ্ধ, আহত ১২
নরসিংদী প্রতিনিধি
|
![]() ফাইল ছবি আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার চরদিঘলদী ইউনিয়ন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বারবার টেটা যুদ্ধ হচ্ছে দুর্গম অঞ্চল চরদিঘলদীতে। পুলিশ প্রশাসন , জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সময় মন্ত্রী , এমপি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একাধিকবার চেষ্টা করেও থামাতে পারেনি এই মরন খেলা টেটা যুদ্ধ । চরাঞ্চলের মানুষগুলো যেন যাযাবরের ন্যায় রক্ত ঝড়ানোর নেশায় মত্ত । একাধিক খুন জখম, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেক নারী পুরুষ, শিশু আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা টৈটা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জানুয়ারি দুপুর ১টায় ভয়াবহ টেটা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে প্রায় উভয় গ্রুপের ১০/১২ জন আহত হয়। বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে বহু টাকার মালামাল ক্ষতি সাধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ।অভিযোগ রয়েছে বিজয়ী শওকত আলী গ্রুপ নিয়ে গেছেন গরু, বাছুর, ছাগল , বিভিন্ন আসবাবপত্র, ফার্নিচার সহ, দামি কাপড় চোপড়। অনুসন্ধানে জানা যায় চরদিঘলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল মনসুর সরকার ও তার ছেলে শামীম সরকার একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী প্রধান ও মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহিন। ঘটনার দিন পূর্ব শত্রুতার জের ধরে চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকের সাথে শওকত আলী গ্রুপের লোকদের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। এঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা শুরু হয়ে টেটা, বল্লম, দা, ছুরি, ককলেট ও বিভিন্ন আগ্নেয়াশ্র সংগ্রহ করে শওকত আলী ও দেলোয়ার গ্রুপের লোকেরা চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকের উপর হামলা করলে উভয় পক্ষের ১০/১২ জন গুরুতর আহত হয়। এসময় চেয়ারম্যান গ্রুপের ৩ জন মেম্বারসহ ৯ জন টেটাবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে। ঘটনার খবর পেয়ে মাধবদী থানা পুলিশ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল মনসুর জানান, শওকত আলী ও দেলোয়ার হোসেন শাহীন এলাকায় বোমাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, লুটপাটসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে । আমাদের গ্রুপের ৯ জনকে টৈটা মেরে মারাত্মক জখম করেছে প্রত্যেকের গায়ে দশ-বারোটি করে টেঁটাবিদ্ধ করেছে। প্রায় ২ কোটি টাকার মালামাল ক্ষতি করেছে। আমার পরিষদের তিনজন মেম্বার টৈটা বৃদ্ধ হয়েছে । প্রায় ৫০ টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে এবং গরু ,বাছুর, ছাগল আসবাবপত্র, দামি কাপড়-চোপড় লুট করে নিয়ে গেছে । শওকত আলী প্রধানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ চরদিঘলদী ইউনিয়নবাসী। তার কাছে শিশু, বৃদ্ধ, যুবক এমনকি ছাত্র-শিক্ষক পর্যন্ত নিরাপদ নয়। কথায় কথায় এলাকায় টৈটা বাহিনী নামিয়ে দিয়ে শুরু করে ভাঙচুর, লুটপাট, টৈটা যুদ্ধ। শওকতের হাত থেকে বাঁচতে চায় এলাকাবাসী । এ ব্যাপারে এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন লোকের সাথে আলাপ করলে তারা জানায় শওকত আলী ও দেলোয়ার হোসেন শাহিন তাদের দল ভারী করার জন্য বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসকল বিএনপি , জামাত শিবিরের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করেছে সেই সকল বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বর্তমানেও আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করছে। তার উদাহরন গত ১৭ জানুয়ারির টেটাযুদ্ধের সময় যুবদল নেতা ও বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছের হাতে রাম দা নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। সাথে ছিল দেলোয়ার হোসেন শাহীন। যার ভিডিও ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এব্যাপারে শওকত আলী প্রধানের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন চেয়ারম্যানের গ্রুপের লোকেরা আমাদের লোকজনের উপর হামলা করলে আমরা প্রতিরোধ করলে আমাদের কয়েকজন লোককে পিটিয়ে আহত করেন। এব্যাপারে মাধবদী থানায় উভয়পক্ষের দুটি মামলা হয়েছে। চেয়ারম্যান গ্রুপের পক্ষের লোক কালাই ভূইয়া বাদি হয়ে আজগর আলীকে প্রধান আসামী করে ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনের নামে মাধবদী থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-১৬। তারিখ ২০/১/২১ইং। অপর দিকে শওকত আলী প্রধানের পক্ষে নাছির উদ্দিন বাদি হয়ে সাদেক মিয়াকে প্রধান আসামী করে ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৩০/৩৪ জনের নামে মাধবদী থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-১৫। তারিখ ২০/১/২১ইং। এঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোন সময় আবারো সংঘর্ষ হতে পারে। এলাকার নিরীহ জনগণ শান্তি চান এবং প্রশাসনের নিকট অপরাধীদের বিচার দাবী করেন।
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |