মিলছে না ড্রাইভিং লাইসেন্স
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
![]() ফাইল ছবি এক বছর ধরে ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন পরিবহন চালকরা। প্রিন্ট বন্ধ থাকায় আটকে আছে প্রায় ১৫ লাখ লাইসেন্স। আবেদন করা লাইসেন্স কবে পাবে তা কেউ বলতে পারছেন না। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিআরটিএ স্মার্ট লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখায় চালকদের ভোগান্তির সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। বিদেশগামী চালকরাও আছেন দুর্ভোগে। তবে বিআরটিএ বলছে, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের অপেক্ষায় চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন বিআরটিএর অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ দিয়ে। রাজধানীর নয়াপল্টনের রিমন আহমেদ। এক বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। অনলাইনে লাইসেন্সের অবস্থানও দেখতে পেতেন অ্যাপ ডিএল চেকারের মাধ্যমে। কিন্তু এখন রেফারেন্স নম্বর দিলে লেখা আসে সার্ভার বন্ধ। এ ভুক্তভোগী বলেন, এখন লাইসেন্সের অবস্থা জানতে পারছি না। কবে সার্ভার চালু হবে, কবে প্রিন্ট করা স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাব, তাও জানি না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) শুধু তারিখ পরিবর্তন করে যাচ্ছে। একই হতাশার কথা শোনান তারিকুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা। কিন্তু এক বছরেও হাতে পাননি তিনি। শুধু তারাই নন, এমন লাখ লাখ সেবাগ্রহীতা পড়েছেন বিপাকে। জানা গেছে, লাইসেন্স সরবরাহের জন্য বিআরটিএ’র সঙ্গে চুক্তি ছিল টাইগার আইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। জাতিসংঘ থেকে প্রতিষ্ঠানটি কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি থেকে বাদ পড়ে। গতবছরের ২৯ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে বিআরটিএ’র। চুক্তি অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। যদি খুব দরকার হয় তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিআরটিএ’র চাহিদা পূরণ করতে হবে। প্রতি আট ঘণ্টায় ছয় হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে। প্রতিষ্ঠানটির লজিক ফোরাম নামে বাংলাদেশি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তায়ন করবে। বিআরটিএ সূত্র জানায়, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে সবকিছু গুছিয়ে ফুল সার্ভিস দিতে সাড়ে চার মাসের সময় দেওয়া হয়েছিলো। সে অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গ্রাহকদের লাইসেন্স দেওয়ার কথা। এ সময়ে প্রিন্ট করা স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রাথমিক কাজও এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। নিজেদের অফিস পর্যন্ত নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাই কবে নাগাদ লাইসেন্স তৈরির কাজ শুরু করতে পারবে তা কেউ সঠিক বলতে পারছেন না। চুক্তি অনুসারে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আমদানি, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রিন্টিং স্টেশন, নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি, অন-লাইন ইউপিএস, ডাটা সেন্টার, সার্ভার, স্টোরেজ মেইনটেইন, লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য গ্রাহককে এসএমএস পাঠানোসহ সব ধরনের সেবা দেবে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। বিআরটিএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, গত ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের দু’টি স্যাম্পল দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো তারা তাদের কাজ শুরু করার প্রাথমিক ধাপে পৌঁছাতে পারেনি। সূত্র জানায়, বিআরটিএ’র সকল ঠিকাদারী কাজে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে সিএনএস নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারাই নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সকল কাজ বাগিয়ে নেয়। মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের নামে নেওয়া কাজটিও সিএনএস’র প্রতিষ্ঠান লজিক ফার্ম কাজটি নিয়েছে। একই কোম্পানী, একই ভবনে সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে সিএনএস গ্রুপ। সহৃত্র জানায়, লাইসেন্স সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর আগে টাইগার আইটি’র মতো মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড ভারতে কালো তালিকাভুক্ত। এরপরও কৌশলে তারা বিআরটিএ’র গুরুত্বপূর্ণ এই ঠিকাদারী কাজটি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে দেরির কারণ জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন্স) সিধাংশু শেখর বিশ^াস বলেন, টাইগার আইটির কার্ড শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে বিআরটিএ। নতুন করে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও তা দুই দফা বাতিল করতে হয়। এ কারণে স্মার্ট কার্ড বিতরণের প্রক্রিয়াটি আরও পিছিয়েছে। গত বছরের ২৯ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কার্ড তৈরি ও বিতরণের ইজারা পেয়েছে ভারতের মাদ্রাজ সিকিউরিটিজ প্রিন্টার্স। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করবে। এজন্য খরচ হবে ১২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কার্ডের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি পাবে ৩০০ টাকা। করোনায় প্রাতিষ্ঠানিক সেবা বন্ধ ছিল। খুব শিগগির তা চালু করা হবে।
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |