মানব জীবনে গণিতের গুরুত্ব
অনুপম হায়াত চৌধুরী
|
![]() অনুপম হায়াত চৌধুরী গণিতের উন্নতির সাথে সাথে মানব সভ্যতার উন্নতি হয়েছে। এটা আমরা অনেকেই জানি না। আমরা আরো জানি না যে, আমাদের পরিপার্শ্বের যা কিছু নান্দনিক, সৌন্দর্যময় তার অন্তরালে রয়েছে গণিতের যুক্তিগুলোর সঠিক প্রয়োগ। অথচ শৈশবে আমাদের সামনে গণিতকে উপস্থাপন করা হয় ভীতিকর বিষয় হিসেবে। আর এর প্রভাব থেকে যায় সারাজীবন। ফলে গণিত আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে কী কাজে লাগে তা আমাদের নিকট অজানাই থেকে যায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে এর ব্যবহার বিদ্যমান। কম্পিউটার, বিমান, বডি স্ক্যানার, সফ্টওয়ার, কোডিং আরো অনেক কিছুর ব্যবহারে আমরা গণিতের প্রয়োগ দেখতে পাই। গণিত আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও বিশ্লেষণ মূলক দক্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করার অন্যতম সেরা উপায় এই গণিত চর্চা। বিখ্যাত দার্শনিক কান্তের মতে, ‘একটি বিজ্ঞান কেবলমাত্র তখনই সম্পূর্ণ, যখন এটি গণিত দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত।’ সুতরাং সমস্ত বৈজ্ঞানিক শিক্ষা, যা গণিত দিয়ে শুরু হয় না বা গণিতের প্রয়োগ নেই তার ভিত্তি ত্রুটিযুক্ত বলে মনে করা হয়। গণিতের অবহেলা বা ভীতি মানুষের জ্ঞান বিকাশে ক্ষতিসাধন করে। বলা চলে যিনি গণিত সম্পর্কে অজ্ঞ, তিনি বিশ্বের অন্যান্য জিনিস সঠিকভাবে জানতে পারবে না। এব্যাপারে ক্যান্ট বলেছেন ‘প্রকৃত বিজ্ঞান হল সেই বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞান যতটা গানিতিক।’ গণিত সমস্ত বিজ্ঞানকে নিখুঁত করে আধুনিক সভ্যতা গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, মেডিসিন, ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিজ্ঞানের উপর জোর দেয়া হয়েছে। এই সমস্ত বিজ্ঞানগুলো কেবল গণিতের সহায়তায় সামনের দিকে অগ্রসর হয়। সুতরাং এটি যথাযথভাবে বলা যায় যে, ‘গণিত হলো সমস্ত বিজ্ঞানের বিজ্ঞান।’ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি পেশার জন্য গণিতের প্রয়োজন অপরিহার্য। বর্তমান যুগকে বলা হয় কম্পিউটারের যুগ। আমরা জানি কম্পিউটারের আবিষ্কারক ছিলেন একজন গণিতবিদ। যেকোনো ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে গণিতের প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। গবেষণার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বাস্তবভিত্তিক মডেল তৈরি গণিত ছাড়া অসম্ভব। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, গণিতে আরো দক্ষ হয়ে ওঠলে এবং এটি গুরুত্ব সহকারে অধ্যায়ণ করলে আমরা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে যাব। গণিতবিদরা আজকের বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে কঠিন সমস্যা সমাধান করেছেন। এমনই একজন গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, ও পদার্থবিদ ছিলেন প্রফেসর ড: জামাল নজরুল ইসলাম। ২০০১ সালে যখন পৃথিবী ধ্বংস হবার একটা গুজব উঠেছিল তখন জামাল নজরুল ইসলাম অংক কষে বলেছিলেন পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে ছুটে চলে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদ গ্যালিলিও বলেছিলেন ‘আমি যদি আবার পড়াশুনা শুরু করতাম তবে আমি প্লেটোর পরামর্শ অনুসরণ করে গণিত দিয়ে শুরু করতাম।’ গণিতের জাদুকরী শক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি স্তরকে করতে পারে সাফল্যমণ্ডিত। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আবিষ্কারের উচ্চ শিখরে আরোহণে গণিতের শিক্ষা অপরিহার্য। তাই প্রাথমিক শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত গণিত শিক্ষাকে আরো সুসংহত করে গড়তে হবে, যৌক্তিক জ্ঞানসম্পন্ন মেধাবী জনগোষ্ঠী, যাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। লেখক: পিএইচডি (ফেলো) বুয়েট, এমফিল (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক (গণিত) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব্ বাংলাদেশ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |