হুমায়ূন আহমেদ : বাংলা সাহিত্যের হ্যামেলিয়ন
নূর মোহাম্মদ
|
![]() ছবি: হুমায়ূন আহমেদ হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান লেখক-যিনি মৃত্যুর আগেই যশ ও জৌলুস উপভোগ করে গেছেন। লেখার ব্যাপ্তিতে তাঁকে বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথও বলা যায়। হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন 564 নং কক্ষে। এ কক্ষে থেকেই তিনি ছাত্রাবস্থায় নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাস দুটি লেখেন। রসায়নের ছাত্র হলেও তিনি সাহিত্যের রসে অবগাহন করেছেন। শুধু লেখালেখি করার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন। হুমায়ূনের জন্ম নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে নানা বাড়িতে। শৈশব কাটে সিলেটে, কৈশোর কাটে বগুড়ায়। তিনি বগুড়া জেলা স্কুলে পড়ালেখা করেন।তারপর ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পিতা পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের থাকতে হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তাঁকে শামসুর রহমান কাজল নামেই চিনে সবাই, চট্টগ্রামে তিনি বাচ্চু নামে পরিচিত ছিলেন। এসব তাঁর পিতারই দেওয়া নাম। তাঁর পিতা জাফর ইকবালকে ডাকতেন বাবুল নামে। হূমায়ুন দশম শ্রেণির ছাত্রী গুলতেকিনকে প্রেম করে বিয়ে করেন। গুলতেকিন ছিলেন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাতনি। এ অসম বিয়েতে গুলতেকিনের পরিবার প্রথমে রাজি ছিল না। হুমায়ূন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক।অবশ্য এর আগে তিনি প্রভাষক হিসেবে ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন চাকরি করেন। হূমায়ুন আট সন্তানের জনক। গুলতেকিন-হুমায়ূন দম্পতির পাঁচ সন্তান এবং শাওন-হুমায়ূন দম্পতির তিন সন্তান। গুলতেকিনের গর্ভজাত সন্তান রাশেদ হুমায়ূন ছোট বেলায় মারা যায়। আবার শাওনের গর্ভজাত প্রথম সন্তান লীলাবতীও জন্মের সময় মারা যায়। লীলাবতীর স্মরণে হুমায়ূন নুহাশপল্লীতে একটি পুকুর খনন করেন। পুকুরটির নামও রাখেন লীলাবতী। শাওন নবম শ্রেণিতে থাকতে হুমায়ূন শাওনের প্রেমে পড়েন। সমাজের চোখে অসম প্রেম হলেও হুমায়ূনের চোখে সকল প্রেমই স্বর্গীয় এবং শোভনীয়। 2005 সালে সমাজের চোখে ধূলা দিয়ে হুমায়ূন শাওনকে আপন করে নেন। অবশ্য এর আগেই গুলতেকিনের সঙ্গে ত্রিশ বছরের সংসারের ইতি টানেন। ২০১১ সালে আকস্মিক ক্যান্সার ধরা পড়লে হুমায়ূন বাংলাদেশে বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ করার সংকল্প করেন। স্বপ্নের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সমুদ্র বিলাস, বৃষ্টিবিলাস, ভূতের বাড়ি কল্পলোকের কতকিছুই করলেন তিনি কিন্তু স্বপ্নের হাসপাতালটি করে যেতে পারেননি। বাংলা টিভি নাটককে জনপ্রিয় করেছেন হুমায়ূন আহমেদ।বাঙালি পুরো পরিবার নিয়ে টিভি দেখার জৌলুস তাঁর হাত ধরে শেখে। তাঁর নাটকের চরিত্র বাকের ভাইকে বাঁচাতে ঢাকা শহরে মিছিল হয়েছে। এসব যেন রূপকথার গল্প। শুধু তাই নয়, পাঠবিমুখ একটা প্রজন্মকে তিনি বইমুখী করেছেন। তরুণ প্রজন্ম বই বলতে পাঠ্য বই মনে করতো। কিন্তু তিনিই প্রথম পাঠ্যপুস্তকের বাহিরে তরুণদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ জাগিয়ে তুলেন। একটা অলস জাতিকে বইমুখী করার জন্যই তাঁকে জাতীয় স্যালুট জানাতে হয়। তাঁর সাহিত্যকর্ম কালোত্তীর্ণ কি না সেটা নিয়ে নানামত থাকতে পারে। মূলত সমালোচনা না থাকলে বড় সাহিত্যিক হওয়া যায় না। হুমায়ূন এখনও বাংলাদেশে অনাবিষ্কৃত প্রতিভা। মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনকে আবিষ্কারের যে সূত্র বাতলে দিয়েছেন তা একদিন মহীরূহ হবে। এ বাংলায় একদিন হুমায়ূন সূর্য হবেন। আলোকিত করবেন বাংলার আসমান-জমিন-সাহিত্য। শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ লেখক: বিভাগীয় প্রধান (বাংলা বিভাগ), সরকারি মুজিব কলেজ, নোয়াখালী। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |