ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে এখন থেকেই কাজ শুরুর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
নতুন বছরে ভরা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কেমন হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আভাস না মিললেও মশাবাহিত রোগটির বিস্তার ঠেকাতে এখন থেকেই কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ভবনে গতকাল রোববার ‘এইডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভা থেকে এ পরামর্শ আসে। গত বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে এডিস মশার বিস্তার রোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. সানিয়া তহমিনা। তিনি বলেন, তা না হলে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে একসঙ্গে হাসপাতালে যাবে। তখন সবার দিকে ভালো করে নজর দেওয়া যাবে না। নজর দিতে না পারলে কিন্তু মৃত্যুর বিষয়টি চলে আসে। সুতরাং অন্তর থেকে আহ্বান জানাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করার। ডিসেম্বরের জরিপে রাজধানীতে ‘খুব কম’ এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার তথ্য তুলে ধরেও তাতে নিরাপদ বোধ করার কারণ নেই বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেছে। এই বৃষ্টিপাত কিউলেক্স ও এডিসের জন্য উপযোগী হয়েছে। এর ফলে বছরের প্রথমেই যদি ডেঙ্গুর পরিমাণ বেড়ে যায় তা হলে কিন্তু সিজনের সময় কী হবে সেটা ভাববার বিষয়। আশা করি, এবার বেশি কিছু হবে না কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস ঘরের ভেতরে ও আশপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে থাকে বলে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই মশার বিস্তার বেশি হয়। সেকারণে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেশি হয় বলে এ সময়কে ডেঙ্গু জ্বরের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জুন থেকেই শুরু হয় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ঋতু। গত বছর মে মাস থেকেই ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়, জুন ও জুলাইয়ে ক্রমেই বেড়েছে আগস্টে তা প্রায় মহামারী আকারে রূপ নেয়। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ১৪৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যদিও বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। চলতি বছর ১ থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৪ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬ জন। সঠিক পরিকল্পনা ধরে এগুলো সামনের মৌসুমে ডেঙ্গু মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক কবিরুল বলেন, জানুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় কিউলেক্স এবং এডিস দুটো সমস্যা আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এটা সমাধানে আমাদের ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্টে যেতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণ একটা যুদ্ধ, এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে সবগুলো অস্ত্র একসঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। এতদিন শুধু সচেতনতা বাড়াতে কাজ করলেও এবার থেকে মশার উৎপত্তিস্থল পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাগরিকদের অসচেতনতায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছিল। গত বছর আমরা বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছি কাদের অবহেলায় ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করেছে। এবারও আমরা অভিযান পরিচালনা করব। এবার এ ধরনের পরিবেশ পাওয়া গেলে জরিমানার পাশপাশি আইন অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মশা একসময় শহুরে সমস্যা থাকলেও বর্তমানে এটি সারাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মশা অনেকগুলো রোগের জন্য দায়ী; ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ওয়েস্টার্ন ভাইরাসের কথাও শোনা যায়। আরও কি আছে আমরা জানি না। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |