শুক্রবার ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
   
পরিবারের আহাজারি
চেয়েছিলেন ছেলে-মেয়েকে অফিসার বানাবে, গুলিতে সব স্বপ্ন শেষ
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪, ৫:৪১ পিএম
২০ বছর আগের কথা। দরিদ্র কোরমান শেখের ঘরে জন্ম নেয় দুসন্তান। এদের নিয়েই দরিদ্র পিতার স্বপ্ন। স্বপ্ন - ছেলেকে বিসিএস ক্যাডার বানাবেন আর মেয়েকে বানাবেন ব্যাংকার। স্বপ্ন বিলাসী দরিদ্র কোরমান এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমান ঢাকার সাভারে। কাজ নেন মুরগির দোকানে। এক পর্যায়ে নিজেই গড়ে তোলেন মুরগির ব্যবসা। ছেলে মেয়েদের ভর্তি করে স্থানীয় স্কুলে। মোটামুটি চলে যাচ্ছিল কোরমান শেখের জীবন।

সম্প্রতি বেশ টানাপোড়নও লেগে থাকতো। কারণ দরিদ্র কোরমান ছিলো ছোট বেলা থেকেই প্রতিবন্ধী। সে মুরগির ব্যবসা ছাড়া অন্য কাজ করতে সক্ষম ছিলো না। ছেলে ও মেয়ে এখন ভার্সিটি পড়ুয়া। তার বড় ছেলে সাভারের শুকুরজান উচ্চ বিদ্যালয় ও সাভার ক্যান্টরমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে পড়ালেখা সম্পন্ন করে এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। মেয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত। এ জন্য বেশ খরচ জোগার করতে হয় কোরমান শেখের। কিন্তু সন্তাদের এসব বুঝতে দেয়না কোরমান শেখ। তাই রাতদিন পরিশ্রম করে। ছেলে মেয়েদের সামনে রেখে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে, নিজের কর্মের অবসর নেওয়ার স্বপ্ন দেখে।

গত ২০ জুলাই শনিবার বেলা ১২ টা। কোরমান শেখের শরীরটা ভালো ছিলো না। ছেলে মেয়েরা বাবাকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ঘর থেকে বের হন কোরমান। দোকানের মাল আনতে হবে, তাই তার সর্ব সম্বল ১ লক্ষ টাকাও সঙ্গে নিয়ে যায়। অসুস্থ শরীর নিয়ে, অতিকষ্টে খুড়িয়ে খুড়িয়ে দোকানে আসেন। আশপাশের আরো ১২-১৩ টি দোকান খোলা ছিলো। এরই মাঝে মেয়ে মিতু আক্তার ফোন দেয়, বাবা বাড়ি ফিরে আসো। কারফিউ ঘোষণা হয়েছে। এ পাশ থেকেও উত্তর মা আসছি। তারপরই পুলিশের বাঁশির শব্দ। যে যার মতো পালাতে থাকে। কোরমান শেখসহ ১৩ জন মুরগি ব্যবসায়ী পালায় বরফ কলে। ৩ ব্যবসায়ী পালায় মসজিদের সিড়ির নিচে। এসময় একদল দুর্বৃত্ত বরফ কলের দরজা ভেঙ্গে ফেলে। তারা প্রথমে কোরমান শেখকে ধরে। এসময় কোরমান হাত জোর করে কাকুতি মিনতি করে বলে আমি প্রতিবন্ধী, এখানে মুরগির ব্যবসা করি। আমাকে ছেড়ে দিন। ঘরে আমার সন্তানেরা আমার অপেক্ষায় আছে। পায়ে ধরি আপনাদের। ওরা কিছুই না শুনে বুকে বন্ধুক লাগিয়ে গুলি করে কোরমানকে। অন্যদেরও গুলি করে চলে যায়। যাবার সময় কোরমানের টাকার ব্যাগটাও নিয়ে যায় হত্যাকারীরা। এভাবেই হায়েনারা ভেঙ্গে দেয় কোরমান শেখের স্বপ্নের বাতিঘর, হাহাকার এনে দেয় এক স্বপ্ন বিলাসী বাবার পরিবারে।

হায়েনাদের বুলেটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কোরবান শেখ (৪৯)। তিনি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া গ্রামের মৃত মেহের শেখের ছেলে। ৭ ভাই বোনের মধ্যে কোরমান সবার ছোট। তাই সবাই তাকে বেশি আদর করতো।

২০ জুলাই রাত ১১ টায় হাজারো মানুষের সমাগমে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বাগপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থানে কোরমান শেখের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় ।

বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কোরমানের মেয়ে মিতু আক্তার জানান, আমার বাবা দরিদ্র হলেও আমাদেরকে দরিদ্রতার কথা বুঝতে দিতেন না। মৃত্যুর আগের দিন থেকে সে অসুস্থ। তার নিজের ঔষধ না এনে আমার জন্য আপেল নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাবা আর আপেল আনবে না, আদর করবে না। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।

ছেলে রমজান শেখ বলেন, বাবাই ছিলো সব। হত্যাকারীরা তার টাকাগুলোও নিয়ে গেল। বাবাকে হারিয়ে আমরা সাগরে পরে গেলাম, দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই।

স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে রমজানের স্ত্রী শিল্পী খাতুন। তিনি বলেন, আমার প্রতিবন্ধী স্বামী ঠিকমতো হাটাচলা করতে পারতো না। তারপরও কেন তাকে হত্যা করা হলো। হত্যাকারীরা কেন তার টাকা গুলো লুট করে নিলো। আজ আমার ও সন্তানদের দায়িত্বকে নিবে। এসব বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে পরেন শিল্পী খাতুন। 

স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






● সর্বশেষ সংবাদ  
● সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
অনুসরণ করুন
     
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী
স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড -এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক আবরণ প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24@gmail.com, info@swadeshpratidin.com
● স্বদেশ প্রতিদিন   ● বিজ্ঞাপন   ● সার্কুলেশন   ● শর্তাবলি ও নীতিমালা   ● গোপনীয়তা নীতি   ● যোগাযোগ
🔝