ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যের নামে থাকা ১০.৩৫ একর জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। তিনি জানান, এদিন মতিউরের সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন। শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।
জব্দের আদেশ দেওয়া সম্পত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশালে মুলাদী উপজেলায় মতিউরের নামে থাকা ১১৪ শতাংশ জমি। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে থাকা নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মারজাল ইউনিয়নের ৫২২.৫২ শতাংশ জমি ও রাজধানীর বসুন্ধরায় ২৪৪৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। মতিউরের ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে থাকা ২৭৫.৮৫ শতাংশ জমি।
এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- নরসিংদীর রায়পুরায় মতিউর-লায়লা দম্পতির মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার ১০৬.৫৬ শতাংশ জমি ও ঢাকার বসুন্ধরায় ৫ কাঠা জমির উপর বহুতল ভবন। মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর নামে থাকা ধানমন্ডির জিগাতলার একটি প্লট (০.০০৮৯৯ শতাংশ) এবং বসুন্ধরায় ৫ কাঠা জমি।
এসব স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা মোট জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০.৩৫ একর বা ১ হাজার ৩৫ শতাংশ।
গত ২৪ জুন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও তাদের পুত্র আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবকে (ইফাত) বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এরপর ৩০ জুন এ বিদেশযাত্রা প্রত্যাহার চেয়ে আদালতে আবেদন করেন লায়লা কানিজ। আগামী ২৮ জুলাই এ বিষয়ে আদালতে শুনানি হওয়ার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ইফাতের কথিত বাবা জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের সদস্য মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চারবার অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবারই অনুসন্ধান পর্যায় থেকে শেষ হয়েছে কার্যক্রম। সম্প্রতি মতিউরের বিরুদ্ধে ফের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
এদিকে এরই মধ্যে মতিউর রহমান দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি ইফাত নামের এক তরুণ কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সবাই খুঁজতে থাকেন এত টাকার উৎস কী? তখনই সামনে আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তা মতিউর রহমানের নাম। যদিও এক পর্যায়ে নিজের ছেলেকেও অস্বীকার করেন মতিউর। আলোচিত সেই ঘটনার পর আর শেষ রক্ষা হয়নি মতিউরের। এনবিআরের পদ থেকে সরিয়ে তাকে সংযুক্ত করা হয় অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে।
জানা যায়, মতিউর রহমানের ছেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কেনেন বলেও উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন, মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি এই কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর